গ্রিসের ইকারিয়া দ্বীপ বহিরাগতদের চোখের আড়ালে ছিল বহু বছর। সবাই ভাবতেন, দ্বীপটি ছেড়ে লোকজন বুঝি চলে গেছে। ইকারিয়ার মানুষ নিজেদের লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন এবং কীভাবে? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
গ্রিসের দ্বীপ
এজিয়ান সাগরের এক দ্বীপের নাম ইকারিয়া। গ্রিক পুরাণে বলা আছে, জ্ঞান ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত দক্ষ স্থপতি ও কারুশিল্পী ডিডালাসের ছেলে ইকারাস একবার সূর্যের খুব কাছে চলে যাওয়ায় দ্বীপটির কাছে আজিয়ান সাগরে পড়ে গিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, ইকারাসের নামানুসারে গ্রিক ওই দ্বীপের নাম রাখা হয়েছে ইকারিয়া। গ্রিসের অন্যান্য দ্বীপ থেকে ইকারিয়া দেখতে একটু আলাদা। সন্ধ্যার সময় এই পার্থক্যটা বোঝা যায় বেশি। গ্রিসের বেশির ভাগ দ্বীপের মানুষ তাদের বাড়িঘর উপকূলের ধারঘেঁষে নির্মাণ করেন। ইকারিয়ার ঘরবাড়িগুলো এজিয়ান সাগরের উপকূলে নয়, বরং দূরে উঁচু পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে নির্মিত। এ কারণে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর উপকূলীয় এলাকা অন্ধকার থাকে। টিম টিম করে জ্বলতে থাকে পাহাড়গুলো। পাহাড়ের ঢালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইকারিয়ার ঘরবাড়ি থেকে আসা আলো দেখলে অনেকের গ্রামের কথা মনে পড়ে যেতে পারে। রাতের বেলা গ্রামে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোনাকিদের ঠিক ওভাবেই আলো জ্বালাতে দেখা যায়। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এজিয়ান সাগরের উপকূলে বাড়ি না বানিয়ে ইকারিয়া দ্বীপের মানুষ এত ওপরে পাহাড়ের গায়ে তাদের বাড়ি বানিয়েছেন কেন? পাহাড়ের ঢালে বাড়ি বানানো যেমন কষ্টকর, তেমনি দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য সমতল থেকে দূরে থাকা ঝক্কির কাজ। প্রশ্নের উত্তর পেতে ইকারিয়ার ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ। এজিয়ান সাগর একদিকে যেমন ইকারিয়াকে দেওয়া ঈশ্বরের আশীর্বাদ, তেমনি এটি অভিশাপও। এই সাগর দিয়ে প্রাচীনকালে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন দ্বীপটির মানুষ। জলপাই, মধু, ওয়াইনসহ দামি পণ্য ইকারিয়া থেকে এজিয়ান সাগর হয়ে প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন শহরে রপ্তানি করা হতো। এই সাগরের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয় ওই দ্বীপ। তবে ইকারিয়ার সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্বীপটিতে উৎপন্ন শস্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রলুব্ধ করে জলদস্যুদের। তারা যখন-তখন দ্বীপটিতে হানা দিয়ে মানুষের বাড়িঘরে লুটপাট চালাত। জমি থেকে শস্য তুলে নিয়ে জাহাজ বোঝাই করত।