পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আমার পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে তাঁদের জীবনসংগ্রাম সম্পর্কে জেনেছি। অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি শূন্য হাতে কীকরে তাঁরা সাফল্যকে ছিনিয়ে এনেছেন। শ্রমে-ঘামে কী করে তাঁরা টিকে থেকেছেন অপরিচিত পৃথিবীতে। প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের এমন এক প্রবাসীর গল্পই শোনাতে চাই, যিনি বিদেশের মাটিতে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে সাফল্যের নিশান উড়িয়ে চলেছেন।
গত বছরের এপ্রিলে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। নেদারল্যান্ডসের এই ভ্রমণে আমরা ছিলাম দ্য হেগ শহরে। আমার টিমে ছিলেন আমার তিন সহকর্মী—আদিত্য, তৌফিক ও তানভীর আশিক। আর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের কর্মকর্তা ওসমান হারুনী। এমনিতে সকালের নাশতা হোটেলেই সারতাম। দুপুরের খাবার যেখানে কাজ করতে যেতাম তার আশপাশে কোনো রেস্তোরাঁয় বসে সেরে নিতাম। আর রাতে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আশপাশের রেস্তোরাঁয় খেয়ে নিতাম। প্রথম দুই দিন রাতের বেলায় নেদারল্যান্ডসের আলু, ব্রেড আর পনির খেয়েই কাটিয়ে দিলাম। তৃতীয় দিন তানভীর গুগল ঘেঁটে বললেন, কাছেই একটা তার্কিশ রেস্তোরাঁ আছে। নাম সিনবাদ। তৃতীয় রাতে খেতে গেলাম সিনবাদে। গলির ভেতর ছোট্ট একটা রেস্তোরাঁ। হোটেলের নামফলকে যদিও তার্কিশ রেস্তোরাঁ লেখা আছে, খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, এটা পরিচালনা করেন মিসরীয় লোকজন। মালিক, বাবুর্চি থেকে শুরু করে ওয়েটার সবই মিসরীয়। প্রচুর ঝালযুক্ত খাবার খেলাম ঠিকই, বুঝতে পারলাম না খাবারটা মিসরীয় না তার্কিশ। যা হোক, চতুর্থ রাতে গুগল ম্যাপ দেখে তানভীর বললেন, ‘পাশেই ভারতীয় একটা রেস্তোরাঁ আছে। নাম রামানা।’ আমি বললাম, ‘রামানা না রমনা? নাম যদি রমনা হয়, তাহলে এটা নিশ্চিত বাংলাদেশিদের হবে। সিনবাদ যেমন নামে তার্কিশ আদতে মিসরীয়, নাম রমনা হলে ভারতীয় খাবারের বাংলাদেশি রেস্তোরাঁই হবে। ষাটের দশকে ঢাকায় বিখ্যাত একটি হোটেল ছিল রমনা নামে।’