অচিন্ত্য পরমেশ্বরের জ্ঞানময় মূর্তি হচ্ছেন দেবী সরস্বতী। তিনি ব্রহ্মের সৃষ্টিরূপ ব্রহ্মার শক্তি স্বরূপা। তাই তাঁর নাম ব্রহ্মাণী, সাবিত্রী এবং গায়ত্রী। দেবী সরস্বতী বৈদিককাল থেকেই পূজিতা।
বেদ-বেদান্তে দেবী সরস্বতীর সাকার নিরাকার উভয় রূপেরই বর্ণনা পাওয়া যায়। কখনো তিনি বাকশক্তিরূপা, কখনো সৃষ্টিশক্তিরূপা, কখনো সাবিত্রী মন্ত্ররূপা, কখনো নদীরূপা অথবা কখনো ব্রহ্মাণ্ডের অধিশ্বরীরূপা। এই বিবিধ রূপেই বেদ এবং বেদ পরবর্তী মহাভারতসহ একাধিক পুরাণে দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। বেদে প্রেরণাদাত্রী, চেতনাদাত্রী এবং জ্ঞানমূর্তি রূপই প্রকাশিত হয়েছে দেবী সরস্বতীর অসংখ্য বেদমন্ত্রে।
অর্থাৎ, সত্য ও প্রিয়বাণীর প্রেরণাদাত্রী এবং সৎ বুদ্ধির চেতনাদাত্রী মাতা সরস্বতী শুভকর্মকে ধারণ করে আছেন। জ্ঞানদাত্রী মাতা সরস্বতী প্রজ্ঞাশক্তি দ্বারা মহান জ্ঞান সমুদ্রকে প্রকাশ করেন এবং ধারণাবতী বুদ্ধি সমূহকে দীপ্তি দান করেন।
দেবী সরস্বতী বৈদিক যুগ থেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে পূজিতা হলেও, বৃহত্তর বাংলা, বিহার এবং আসামে সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি গুপ্তযুগ পরবর্তীকালের।
প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী দেবীকে বিভিন্ন তান্ত্রিক পদ্ধতিতে পূজা করতেন। বিদ্যা-কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে 'বাগেশ্বরী' নামটি প্রাচীনকালে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন সম্প্রদায় সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
দেবীর আরাধনার পবিত্র তিথির নাম 'শ্রীপঞ্চমী'। দিনটি বিদ্যা-কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর আরাধনার এক শুদ্ধতম তিথি। শুক্লপক্ষের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে আসনের তালপাতার পুঁথি এবং দোয়াত-কলমকে দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজা করার প্রথা আজও প্রচলিত।