মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। ঘোষণা দুটি হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর। যে বিইআরসি আইন দিয়ে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই আইনকেই এক প্রকার বিলুপ্ত করে দেওয়া হলো।
এর আগে ২০১০ সালের দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন ভোক্তাকে লুণ্ঠনের শিকারে পরিণত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে; বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের সুযোগ তৈরি করেছে এবং অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাতে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, তাতে ধরা পড়ছিল। কিন্তু এবার সেই যাচাই প্রক্রিয়াকেই সমাহিত করে দেওয়া হলো।
আমরা ২০০৮ সাল থেকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতার জন্য লড়াই করছি; যেখানে একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছি। এই খাতে স্বচ্ছতা এলে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে বিদ্যুতের সেবা পাবে। এই খাতে একটি ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল; আমরা জাতীয় পর্যায়ের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এরকম সংস্থার স্বপ্ন দেখছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম- প্রতিটি খাতে রেগুলেটরি সিস্টেম হবে; যেখানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন হবে দৃষ্টান্ত। এই খাতে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, একই সঙ্গে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা ছিল বিইআরসির কাজ। কিন্তু বিষয়টি যখন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিল, তখন আমরা দেখলাম- ২০১০ সালে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন করা হলো এবং অনেক বিষয়কে রেগুলেটরি সিস্টেমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন বিইআরসি অনেকটাই লোক দেখানো একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে গেল। এর পরও মূল্য নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় এর বড় একটি ভূমিকা ছিল।