প্রাণী ইঁদুররা মাটিখেকো নয়, বসবাসের জন্য গর্ত করে। খরগোশ, শজারু, শেয়াল, বন্যকুকুর ইত্যাদি প্রাণীরাও তাই করে। জলাশয়ের মাছদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতিও মাটি খুঁড়ে গর্তে বসবাস করে। অমেরুদন্ডী প্রাণী কেঁচো মাটি খনন করে বসবাস করে। ওরা মাটিখাদক, কিন্তু উর্বরা শক্তিদান করে মাটিকে। আধুনিক চাষের প্রধান যে উপকরণ জৈব সার, কেঁচো সার নামে যার পরিচয় তা কেঁচোরই দান। আমাদের পরিচিত মাছদের মধ্যে বেলে মাছের পোনা অতিক্ষুদ্র বালিকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই মাছের নামকরণও বালি থেকেই এসেছে। তা ছাড়া পাখি বা প্রাণীদের কেউ কেউ খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের খনিজ মাটি খেয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষই বোধকরি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাটিখেকো প্রাণী। ওদেরই অন্য নাম নরইঁদুর।
মানবসভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মাটিকে খেয়ে ফেলা বা অত্যাচারের অভ্যাস খুব প্রাচীন। কৃষিসভ্যতার বিকাশের যুগে শুধু অরণ্য নয়, তৃণ নয়, প্রকৃতির দান হাজার হাজার পাহাড় ধ্বংস করেছে মানুষ। সমতল খামার ভূমি তৈরি করেছে। এতে ওই এলাকার প্রকৃতির চরিত্রই পাল্টে যায়। সর্বনাশের শুরু শিল্পবিপ্লবের আধুনিক যুগে। শিল্প-কারখানা তৈরি থেকে শ্রমিক কলোনি তৈরিতে পাহাড়কে হত্যা করা হয়। এর ফলে ইউরোপে কোনো এলাকায় ঠান্ডা এবং কোনো এলাকায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকা থেকে দাস সংগ্রহ এবং উপনিবেশের প্রজাদের শাসক দেশে আগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজন পড়ে ভূমির। আবাসনের। নগরায়ণের। এর ফলে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। দুগ্ধ উৎপাদনের নামে, মাখন বা চিজ তৈরির জন্য হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া গোচারণভূমির জন্য পাহাড় ধ্বংস করেছে। পুঁজিবাদী মুনাফার লোভ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে।