পেয়ালায় চুমুক দেওয়ার আগে যদি সেই চায়ের জীবন-কাহিনি জানা যায়! চায়ের সুদৃশ্য মোড়কেই ‘বিধৃত’ থাকবে সেই কাহিনি। এ বার পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে সেই চা পাতার গল্পও পড়ে নিতে পারবেন চা-রসিকেরা। যে গল্প অনেকে জানেন, আবার অনেকেই জানেন না। এ বার সেই ব্যবস্থাই করতে চলেছে জলপাইগুড়ির ছোট বাগানের সংগঠন ও চা পর্ষদ।
চায়ের প্যাকেট থেকেই জানা যাবে, কোন বাগানে সেই পাতা-কুঁড়ি ফুটেছিল। জানা যাবে, চা গাছকে কী ভাবে যত্ন করা হয়েছে। সবুজ কচি পাতায় শিশির পড়েছে, বৃষ্টির ফোঁটা পাতা থেকে গড়ানোর দৃশ্যও দেখা যাবে। চা গাছে কোন ওষুধ দেওয়া হয়েছে, বিষাক্ত কোনও কীটনাশক দেওয়া হয়েছে কিনা তাও শোনা যাবে, যাঁরা চা গাছের যত্ন করেছেন তাঁদের মুখ থেকে। এই কাজ শুরু হয়েছে জলপাইগুড়িতে। চা পাতার মোড়কে থাকবে একটি ‘কিউআর কোড’। সেটিকে স্ক্যান করলেই মোবাইলের পর্দায় দেখা যাবে ওই প্যাকেটে যে চা পাতা রয়েছে, তার বৃত্তান্ত। জেলার ছোট চা বাগানের হাত ধরে চায়ের এমন গল্প বাজারে আসতে চলেছে কিছুদিনের মধ্যেই।
চায়ের প্যাকেটে চা তৈরির গল্প রাখার ভাবনা মূলত তিনটি সংস্থার। জলপাইগুড়ি জেলায় ছোট চা বাগানগুলির সংগঠন, চা পর্ষদ এবং একটি পেশাদারি কারিগরী সংস্থা। হঠাৎ কেন এমন প্রয়োজন হল, কতজনই বা ‘কিউআর কোড’ স্ক্যান করতে পারবেন— সে সব প্রশ্নও উঠেছে। চা তৈরির এমন গল্প দেখাতে হলে বিপণন খরচও কি বেড়ে যাবে, সে প্রশ্নও চা চাষিদের অনেকেই তুলেছেন। জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির তরফে দাবি করা হয়েছে, চা পর্ষদ এবং কারিগরি সংস্থার সহায়তায় প্যাকেটে ‘কিউআর কোড’ বসানো থাকবে, তার জন্য কোনও অতিরিক্ত খরচ হবে না। মূলত বিদেশের বাজারে ছোট চা বাগানের পাতা পাঠানোই লক্ষ্য পর্ষদের।
চা পর্ষদ সূত্রের দাবি, কীটনাশক ছড়ানো চা বিদেশের বাজারে বিক্রি হয় না। কোথাও চা তৈরি হচ্ছে, কী ভাবে চা তৈরি হচ্ছে সেটি বিদেশের বাজারে তুলে ধরতেই ‘কিউআর কোড’ রাখা হবে। এটি স্ক্যান করলে জলপাইগুড়ির ভৌগোলিক অবস্থান থেকে বাগান কোথায় রয়েছে তার ছবি দেখা যাবে। হাতের আঙুলের টানে বাগানের পাতা ছিঁড়ে আনা থেকে শুরু করে সেই পাতা রোদে শুকোনো, কারখানায় নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা— সব দেখানো হবে ভিডিয়ো চিত্রে। কারা চা পাতা তুলছেন, কে ওষুধ ছেটাচ্ছেন বাগানে, সে সব দৃশ্যও থাকবে।