শীত আসতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গুড়ের মিষ্টি সুবাস। কারণ এ সময় পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। আর পিঠা বা পায়েসের স্বাদ গুড় ছাড়া ঠিক জমে না! এগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় নলেন, আখ বা খেজুরের গুড়।
পুষ্টিবিদদের মতে, রস থেকে তৈরি প্রাকৃতিক গুড়ে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরের গুড়ে এমন অনেক ওষুধি গুণ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মাসিকের ক্র্যাম্পের জন্যও গুড় একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। মোটকথা পরিমিত গুড় খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খুবই উপকারী। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এই শীতে গুড় খেলে দূরে থাকবে যেসব রোগ-
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ
যাদের ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়, তাদের জন্য গুড় হতে পারে সবচেয়ে উপকারী সমাধান। গবেষণা অনুসারে, গুড় শরীর থেকে ধূলিকণা ও অবাঞ্ছিত কণাগুলোকে দূর করে।
ফলে শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুস, খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহের উপশম ঘটে। সেরা ফলাফলের জন্য মরিচ, তুলসি, শুকনো আদা বা তিলের সঙ্গে গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
শীতে অনেকেরই ওজন বেড়ে যায়। তবে গুড় খেয়ে এ সময় সহজেই ওজন বশে রাখতে পারেন। গুড় একটি জটিল চিনি, যা সুক্রোজের দীর্ঘ চেইন দ্বারা গঠিত। শরীর সুক্রোজ হজম করতে সময় নেয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনি পূর্ণ বোধ করবেন। মোটকথা গুড় ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া গুড় হলো পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। যা ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে ও পেশি তৈরিতে সাহায্য করে।অন্যদিকে পটাসিয়াম শরীরে পানি ধারণ কমাতেও সাহায্য করে। তাই ওজন কমাতে গুড় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
গুড়ের পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের উপস্থিতি শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখে। গুড় রক্তনালিকে প্রসারিত করে মসৃণ প্রবাহ ও রক্তচাপ স্থিতিশীল করে। তাই কেউ যদি উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপে ভুগেন, তাদের খাদ্যতালিকায় নির্দ্বিধায় রাখতে পারেন গুড়।
অ্যানার্জির উৎস
গুড় খেলে মুহূর্তেই অ্যানার্জি মেলে। এমনকি গুড় ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে যা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। এর কারণ এটি অপরিশোধিত। ক্লান্তি প্রতিরোধেও সাহায্য করে গুড়।
মাসিকের ব্যথা কমায়
মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য গুড় একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার। গুড় খাওয়ার ফলে এন্ডোরফিন (সুখী হরমোন) নিঃসৃত হয়। মাসিকের বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- মেজাজের পরিবর্তন, খাবারের লোভসহ আরও অনেক কিছু মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। গুড় নিয়মিত সেবনে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে আসে।
রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করে
রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য, শরীরে আয়রন ও ফোলেটের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে আরবিসি’র মাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন। গুড়ে আয়রন ও ফোলেট দুটোই মেলে। তাই নিয়মিত গুড় খেলে রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ হয় দ্রুত।
শরীর পরিষ্কার করে
খাবার খাওয়ার পর গুড় খেলে অন্ত্র, পাকস্থলী, খাদ্যনালি, ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র থেকে সব ধরনের অবাঞ্ছিত কণা সফলভাবে অপসারণ হৈয়।