২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো ফসল আবাদের তোজজোড় শুরু করেছেন চাষীরা। আমন কাটা শেষে বোরোর চারা লাগানোর জন্য তারা জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। হাওর ও বিল এলাকার চাষীরা এরই মধ্যে চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। দেশে উৎপাদিত মোট চালের বেশির ভাগ আসে বোরো থেকে। এর পরিমাণ দেশে উৎপাদিত মোট চালের ৫৫ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে আমন ও আউশ। অথচ ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত দেশে চাল উৎপাদনের শীর্ষস্থানটি আমনের দখলে ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ডাটাবেজ অন ফুড সিচুয়েশন বাংলাদেশ ২০০৩’ থেকে দেখা যায়, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে চাল উৎপাদনে শীর্ষে ছিল আমন। ওই অর্থবছরে দেশে আমন ও বোরো উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৮ লাখ ৫০ হাজার এবং ৮১ লাখ ৩৭ হাজার টন।
পরের অর্থবছরে (১৯৯৮-৯৯) এ চিত্র পাল্টে যায়। ১ কোটি ৫ লাখ ৫২ হাজার টন চাল উৎপাদন করে বোরো শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল উৎপাদন করে আমন দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে। সেই থেকে বোরো দেশে চাল উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রেখেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিক থেকে বোরোর আবাদ আমনের আবাদের চেয়ে অনেকটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। বোরোর ভালো ফলন যেমন চাষীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে, তেমনি দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে জোরদার করে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কৃষি খাতে (শস্য উপখাত, প্রাণিসম্পদ ও মত্স্য উপখাত এবং বন উপখাত নিয়ে গঠিত) প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ার প্রভাবে খাতটির শস্য উপখাতের প্রধান ফসল এবং আমাদের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের নিচে নেমে এসেছে। একদিকে গত এক বছর ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে পণ্যটির উৎপাদন যেমন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে ও চাল আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে চালসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা অত্যধিক ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এদিকে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এ সংকটের বাইরে নয়। তাই খাদ্য সংকট যথাসম্ভব এড়াতে আমাদের জোর দিতে হবে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে। এ মুহূর্তে আমাদের সামনে রয়েছে দেশে চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা বোরো ফসল। এ বছর আমাদের বোরো থেকে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ উৎপাদন পেতে হবে। এজন্য আমাদের কী করা দরকার তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।