সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বর্তমান অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন। বছরে দু'বার মুদ্রানীতি ঘোষণার সংস্কৃতি পুনরায় চালু করার জন্য তাঁকে বিশেষ ধন্যবাদ। দেশের এবং বিশ্বের অর্থনীতি যেভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে তাতে বছরে দু'বার কেন, আরও ঘন ঘন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা গেলে ভালো হতো। পাশের দেশ ভারতেও বছরে ছয়বার অর্থাৎ দুই মাসে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। কী বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝের বছরগুলোতে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা এখনও আমার কাছে বোধগম্য নয়। এতে করে মুদ্রানীতি তার স্বকীয়তা খানিকটা হারিয়েছিল। বাজেটের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল মুদ্রানীতি। এখনও মুদ্রানীতি তার স্বকীয়তা রক্ষা করতে চাইলে প্রতি দু'মাসে অভ্যন্তরীণ বিচার-বিশ্নেষণ সাপেক্ষে নীতিসূচকগুলোর পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিতে পারে। সময়ের চাহিদা মাথায় রেখে এটা করা গেলে এই নীতি আরও বাস্তবানুগ করা সম্ভব।
তবে মানতেই হবে, এবারের মুদ্রানীতিটি সমকালীন বাস্তবতায় অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়েছে। মুদ্রানীতির রূপরেখাটিও বেশ যুক্তিসম্মত হয়েছে। বরাবরের মতো শুরুতেই বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরা হয়েছে। যথার্থই বলা হয়েছে- ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের 'জিরো কভিড'নীতি, ইউরোপে জ্বালানি সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী নীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর আকাশচুম্বী ঋণের বোঝা বিশ্ব অর্থনীতিকে বিরাট সমস্যার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়াসহ উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নতুন করে কভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশও এই বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার বাইরে নয়। বাংলাদেশেও গত কয়েক মাস ধরেই বহিঃঅর্থনীতির প্রভাবে উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতি, তারল্য এবং বিনিময় হারে বড় ধরনের চাপ অনুভূত হতে দেখা গেছে। এসব চাপ আরও ঘনীভূত হয়েছে ব্যাংক ও অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ এবং সুশাসনের চ্যালেঞ্জের কারণে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশে।