মানুষের সভ্যতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর হলো অভিধানের বয়স, তবু তা নিয়ে ভয় আমাদের কাটল না। এ ডিকশনারি নিয়ে সাধারণভাবে বাঙালিদের মধ্যেও একটা অমূলক আতঙ্ক আছে। তার একটা বড় কারণ বোধহয় সাধারণ অভিধানের সাইজ দেখতে বিশাল, শক্ত বাঁধাই, ছুড়ে মারলে বাঘ ঘায়েল হয়ে পালাবে। এ সাইজ ছিল বলেই প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের একটা গল্পে (‘প্রণয় পরিণাম’ কি? বুড়ো বয়সে অত মনে থাকে না।) ক্লাস নাইনের প্রেমিক নায়ক প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ওয়েবস্টার ডিকশনারি মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়েছিল।
শুধু প্রভাতকুমারই নন, স্বয়ং পরশুরামও এ ওয়েবস্টার ডিকশনারিকে আরেকভাবে ব্যবহার করেছেন। ‘কচি সংসদ’ গল্পেই সম্ভবত স্যার আশুতোষ লালিমা পালের দলবলকে ডিকশনারি নিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন। আর ডিকশনারি সম্বন্ধে আতঙ্কের দু’নম্বর কারণ হলো, তাতে অসংখ্য কঠিন কঠিন শব্দ থাকে, যাদের বলা হয় ‘আভিধানিক’ শব্দ, তা যারা ব্যবহার করে তাদের আমরা ভয় পাই। সেজন্য সজনীকান্ত দাস কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্বন্ধে ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন, ‘সুধীন দত্ত কবি ভারী কথায় কথায় ডিকশিনারি!’ কথাটা নিতান্ত ভুল নয়। ‘তবু অন্তরে থামে না বৃষ্টিধারা’র পরেই যিনি লেখেন ‘সান্দ্র, ধূসর, বিদেহ নগর, মৎসর, প্রেত-পারা’ তাকে নিয়ে সাধারণ পাঠক তো একটু ঘাবড়েই থাকেন। অনেকেই তাই সারাজীবন ডিকশনারির ছায়া মাড়ান না, এমনকি মাথায় বালিশ করে শোওয়ার জন্যও না, তা ছুড়ে শত্রুকে ঘায়েল করার জন্যও না।