রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো আয় বিদেশেই গায়েব করে দেয় অর্থ পাচারকারী ও হুন্ডি কারবারি চক্র। প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে না আসার কারণ খুঁজতে গত বছরের শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। ফিরে এসে দলটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানত ৯টি কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠান না। এই সুযোগ নিচ্ছে হুন্ডি কারবারিরা। সিআইডির দাবি, অর্থ পাচারকারীদের তিনটি চক্র তিন ধাপে প্রবাসী আয় হাতিয়ে নেয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হলেও অর্থ পাচারকারী কেউ ধরা পড়েনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ পথে বছরজুড়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তার প্রায় সমপরিমাণ বিদেশেই গায়েব করে দেওয়া হয়। সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন) কুসুম দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের কথা শুনেছি, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্স যাতে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য সিআইডি কাজ করছে। হুন্ডি প্রতিরোধে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’ সিআইডির প্রতিবেদন মতে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার তিনটি ধাপে হয়ে থাকে। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারকারীদের প্রথম দলটি দেশে মৌখিক চুক্তিতে এমএফএস এজেন্টদের অর্থ দেয়। বিদেশে দ্বিতীয় দলটি ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এরপর তারা তা জানিয়ে দেয় দেশে এমএফএস এজেন্টদের। সে অনুযায়ী প্রণোদনাসহ টাকা দেশে প্রবাসীর স্বজনের হাতে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। ফলে প্রবাসীর পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, রিজার্ভও বাড়ছে না।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি।