আমাদের জীবন বা স্বাস্থ্যে সম্পর্ক কীভাবে প্রভাব ফেলে, কী ধরনের সম্পর্ক আমাদের সুখের অনুভূতি দেয়, সুন্দর সম্পর্কের জন্য কী করা উচিত, এসব বিষয়েই আজ কথা বলব।
হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমার জানামতে, একই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে এটিই দীর্ঘতম গবেষণা। ১৯৩৮ সাল থেকে আমরা কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করছি। ছেলেবেলা থেকে তাঁদের বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া, সন্তান হওয়া, সন্তানদের সন্তান হওয়া, সবই আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। হাজারো জীবনকে কাছ থেকে দেখেছি এবং ৩০ বছর আগে থেকে আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছি, সুসম্পর্কের সঙ্গে সুন্দর জীবন কিংবা ভালো থাকার একটা চমকপ্রদ যোগসূত্র আছে। একই সঙ্গে এ-ও দেখেছি, শুধু সুসম্পর্কের কারণেও মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে, মস্তিষ্ক আরও চৌকস হয়।
শুরুতে আমরা এই উপাত্ত পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম, ‘সম্পর্ক’ কীভাবে আমাদের শরীরের ভেতর ঢুকে পড়তে পারে? কীভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে? কিন্তু অন্যান্য গবেষণায়ও তখন একই বিষয় উঠে আসতে থাকে। আমরা দেখেছি, যাঁরা হতাশায় কম ভোগেন, তাঁদের ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম। যাঁরা সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে জানেন, তাঁরা দ্রুত রোগ থেকে সেরে উঠতে পারেন।
একার লড়াই
এখন প্রশ্ন হলো—ভালো থাকা কিংবা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর সম্পর্ক কীভাবে প্রভাব ফেলে?
যে তত্ত্বটি মোটামুটি প্রমাণিত, তা হলো—এর কারণ মানসিক চাপ। মানসিক চাপ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাপ বাড়া কিংবা কমার ক্ষেত্রে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দিন শেষে সম্পর্কই বড়
ভালো থাকার জন্য কী ধরনের সম্পর্ক জরুরি? বিষয়টা মজার। আমরা যাদের নিয়ে গবেষণা করছি, তাদের প্রশ্ন করেছিলাম, মাঝরাতে অসুস্থ বোধ করলে কিংবা ভয় পেলে তুমি কাকে ফোন করবে? অনেকে অনেকের কথা বলেছে। কিন্তু কেউ কেউ কারও কথাই বলতে পারেনি। আমাদের গবেষণা বলে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে ভরসা করার মতো কিংবা বিপদে আশ্রয় পাওয়ার মতো অন্তত একজন মানুষ থাকা চাই।
সুসম্পর্ক গড়তে কী করব
কীভাবে আমরা মানুষের সঙ্গে যুক্ততা আরও বাড়াব? আমরা বলছি, এর জন্য প্রয়োজন ‘সামাজিক সুস্বাস্থ্য’ (সোশ্যাল ফিটনেস)। শারীরিক সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমরা ব্যায়ামাগারে যাই, হাঁটি, একটা কিছু করি। বাড়ি ফিরেই কিন্তু বলি না, ‘কাজ শেষ। যথেষ্ট হয়েছে। আর পারব না।’ আমরা জানি, এটা একটা চর্চার অংশ। সামাজিক সুস্বাস্থ্যও একই রকম। বন্ধুত্ব আর ভালো সম্পর্ক মানে শুধু খেয়াল রাখা নয়। বরং তাঁদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। বারবার তাঁদের কাছে ফিরে যাওয়া।