বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ এখনই প্রত্যাহার করার কোনো পরিকল্পনা নেই। অন্তত আগামী ৬ মাস ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ বহাল থাকবে। তারপর বিষয়টি পর্যালোচনা করা হতে পারে। উল্লেখ্য, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে দিতে পারে না। বাজার চাহিদা এবং জোগানের ওপর নির্ভর করেই ব্যাংক ঋণ এবং আমানতের সুদ হার নির্ধারিত হওয়ার কথা।
যখন আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে অনুসন্ধান করে দেখেছিলাম, তাদের ‘কস্ট অব ফান্ড’ হচ্ছে সোয়া ৮ শতাংশ। যে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড সোয়া ৮ শতাংশ, তারা কীভাবে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে? এভাবে ব্যাংক ঋণের সুদ হার এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদ হার উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার ফলাফল কখনোই ভালো হতে পারে না। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্যও এই উদ্যোগ ভালো ফল বয়ে আনেনি। এ খাতে বর্তমানে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে, তার পেছনে ঋণের সুদের হার ও আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জোর করে ছাগলকে পানিতে নামানো যায়, কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পানি পান করানো যায় না। ব্যাংক ঋণ এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদহার বলপূর্বক নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে কখনোই ভালো ফল আশা করা যায় না। অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ঋণের ওপর আপার ক্যাপ আরোপের বিরোধিতা করে আসছেন। এ বিরোধিতা আরও জোরালো হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে।