বর্ষবরণের পরেই বাঙালির যে উৎসব দরজায় কড়া নাড়ে, তা হল পৌষ সংক্রান্তি। বাঙালির পিঠেপুলির উৎসব। অনেকেই আবার মকর সংক্রান্তিও বলে থাকেন এই উৎসবকে। সাধারণত ১৪ জানুয়ারি কিংবা তার আগে-পরে এই তিথি আসে। প্রাচীনকাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব। বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ ঐতিহ্যবাহী দিন পৌষ সংক্রান্তি। বাংলা মাস অনুযায়ী, পৌষ মাসের শেষ দিন পালিত হয় এই উৎসব।
বাঙালিরা তো বটেই, দেশের নানা প্রান্তে এই দিনটিকে নানা ভাবে বিশেষ পালন করা হয়। এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসবের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। মেয়াদও আলাদা হয়ে থাকে। কোথাও আবার চার দিন পর্যন্ত চলে এই উৎসব। বাংলায় যে উৎসব মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত, তামিলনাড়ুতে সেটি আবার পোঙ্গল, গুজরাতে উত্তরায়ণ, অসমে ভোগালি।
অনেক বাড়িতেই পৌষপার্বণ খুব জাঁকজমক করে পালিত হয়। অনেক বাড়িতে সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোপার্বণের পালা। মকর সংক্রান্তির দিন সারা বাড়ি জুড়ে আলপনা দেওয়া হয়। তার পর সূর্যদেবের পুজো করার চল রয়েছে। অনেকেই তা করে থাকেন। সূর্যদেবের আশীর্বাদে যাতে বাড়ির সকলে রোগমুক্ত থাকেন, সেই কারণেই এই পুজো। অনেকে আবার বাড়িতে পৌষলক্ষ্মীর পুজোও করে থাকেন। সাধারণ লক্ষ্মীপুজোর মতোই পৌষলক্ষ্মী পুজোর একই নিয়ম। পুজোর আগে বাড়ির উঠোন, পুজোর জায়গা গোবর দিয়ে নিকোনো হয়। গ্রামের দিকে ধানের মড়াইতে শ্রী চিহ্ন আঁকা হয়। মা লক্ষ্মীকে ভোগে দেওয়া হয় নতুন চালের পিঠে, পায়েস, অন্নভোগ। বাড়ির মহিলারা ব্রতকথা পাঠ করেন।
পুজো-পার্বণ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে সকাল থেকে চলে নানা রকম পিঠে তৈরির প্রস্তুতি। পুলিপিঠে, পাটিসাপটা, আস্কে পিঠে, গোকুল পিঠে, ভাজা পিঠে, চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি, দুধপুলি, আদোশা, সরুচাকলি, রসপিঠে, কলাইডালের রসবড়া। রকমারি পিঠের গন্ধে ম ম করে ওঠে গোটা বাড়ি। পাটালি গুড় আর নতুন চাল একসঙ্গে মিশে মনভাল করা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাড়িময়। যদিও পৌষপার্বণের প্রধান সরা পিঠে। আগেকার দিনে সরা পুড়িয়েই পিঠে তৈরি করা হত। নতুন চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয় এই পিঠে। প্রথমটি দেওয়া হত গরুকে। গ্রামের দিকে অনেক বাড়িতেই এখনও এই নিয়ম পালন করা হয়।