সকাল ছয়টা। শ্রীলঙ্কা রাজধানী কলম্বোর এক দম্পতি জ্যাসিন্থা ও নিশান্তের বাড়ির দৃশ্য। তাদের দুই নাতনি স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর জ্যাসিন্থা কোরোসিনের চুলায় পরিবারের সবার জন্য রঙ চা তৈরি করছেন। অথচ সবসময়ই তিনি গ্যাসের চুলাতেই সব রান্না সারতেন। আর চা বানাতেন ঘন দুধ দিয়ে। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট বদলে দিয়েছে ওই পরিবারের দৈনন্দিন জীবন, এমনকি চা বানানোর মতো ব্যাপারও।
শুধু জ্যাসিন্থা ও নিশান্তর পরিবারই নয়, অর্থনেতিক সঙ্কটে পড়ে বদলে গেছে তাদের মতো অনেক পরিবারেরই দৈনন্দিন জীবনযাপন। ২০২১ সালের তুলনায় শ্রীলঙ্কায় এখন এক কেজি দুধের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তখন এক কেজি দুধ কিনতে লাগতো ১ হাজার ১৭০ শ্রীলঙ্কান রুপি বা ৩ ডলারের কিছু বেশি। ২০২৩ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৫০ রুপি বা ৬ ডলারের বেশিতে। আবার রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম একই সময়ে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গ্যাস সিলিন্ডারে দাম ১ হাজার ৪৯৩ রুপি থেকে ৪ হাজার ৩৬০ রুপি হয়েছে। যা অনেক পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
দেশটিতে কেরোসিন এখন রান্নার জন্য একমাত্র সাশ্রয়ী জ্বালানি। জ্যাসিন্থা জানান, যদিও এর দামও বেড়েছে । ২০২১ সালে এক লিটার তেল কিনতে ৮৭ রুপি লাগতো, বর্তমানে দাম বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ রুপিতে।
নাতনিরা স্কুলে চলে যাওয়ার পর, জ্যাসিন্থা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে আজকাল অসুস্থ হওয়ায় তার দৈনিন্দন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
জ্যাসিন্থা জানান, খরচের চাপে সময়মতো ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমি ভ্যাকসিন দিতে পারেননি। এ কারণে আজকাল কাশি দিলে রক্ত বের হচ্ছে। অথচ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে চিকিসৎকরা আগেই তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।
জ্যাসিন্থা আরও জানান, অসুস্থ এবং দুর্বল বোধ করা সত্ত্বেও, তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতে এক বাড়িতে যান। ওই বাড়িতে দৈনিক ১ হাজার রুপি বা ২ দশমিক ৭১ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মীর কাজ করেন।
জ্যাসিন্থার মাসিক আয় প্রায় তার সিকিউরিটি গার্ড স্বামীর সমান। কিন্তু অসুস্থ থাকায় ডিসেম্বরে তার আয় ব্যাপকভাবে কমে যায়। কারণ কাজে অনুপস্থিত থাকলে তিনি সেই দিনের বেতন পান না।