ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।
তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়॥
হে বিজয়ী বীর, নব জীবনের প্রাতে
নবীন আশার খড়্গ তোমার হাতে--
জীর্ণ আবেশ কাটো সুকঠোর ঘাতে, বন্ধন হোক ক্ষয়॥
এসো দুঃসহ, এসো এসো নির্দয়, তোমারি হউক জয়।
এসো নির্মল, এসো এসো নির্ভয়, তোমারি হউক জয়।
প্রভাতসূর্য, এসেছ রুদ্রসাজে,
দুঃখের পথে তোমারি তূর্য বাজে--
অরুণবহ্নি জ্বালাও চিত্তমাঝে, মৃত্যুর হোক লয়॥
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবন্দি করে। কিন্তু কী আশ্চর্য বন্দি মুজিব আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। রণাঙ্গনে প্রতিজন যোদ্ধাই হয়ে উঠলেই এক একজন মুজিব। তার নামেই পরিচালিত হলো মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অবশেষে বাঙালি পেল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার জন্য বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কারান্তরীণ রাখা হয় বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু তার নামেই পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। অবশেষে বাঙালি পায় তার বহুদিনের লালিত স্বপ্নের লাল সবুজ পাতাকা আর স্বাধীন মানচিত্র। অবশেষে পাকিস্তানি জান্তা স্বাধীন দেশের নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (যার নামে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে) স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।