তাল-তমালের দেশে কাকতালীয় ঘটনার শেষ নেই। পড়ার মুহূর্তেই কোত্থেকে কাক এসে তালের ওপর বসে, আর তাল তখন ঠাস করে না পড়ে বরং পড়ে ঠাস করে। তালের মরসুম ছাড়াই এই কনকনে মাঘ মাসেও এই ধরনের ঘটনা দুই তিন দিন পরপরই ঘটছে।
সর্বশেষ কাকতালীয় ঘটনা ঘটল গতকাল রোববার কুড়িগ্রামে। সেখানে চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা আচমকা ‘ফিল’ করেছেন, সাংঘাতিক শীত পড়েছে। এই শীতের মধ্যে বাচ্চাকাচ্চাদের ৮ জানুয়ারি রোববার স্কুলে যাওয়া ঠিক হবে না। শিশুদের ঠান্ডা-কাশি থেকে বাঁচাতে তাঁরা ওই দিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
কাকতালীয় ঘটনা হলো, ওই তিনটি উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-৪ নামের যে আসন, সেই আসনের এমপি হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। আর জাকির হোসেনের ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বউভাত ছিল সেই রোববারই। আরও কাকতালীয় ঘটনা হলো, যে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেই স্কুলগুলোর ১ হাজার ২৮০ জন শিক্ষকের সবাই বউভাতে দাওয়াত পেয়েছিলেন। তাঁরা চাঁদা তুলে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও স্বর্ণালংকার সহযোগে দলে দলে সেই বউভাতে শরিক হয়েছেন। এর ফলে শিশুদের স্কুলে যেতে হয়নি। তারা প্রাণঘাতী ঠান্ডা জ্বর থেকে বেঁচে গেছে।
এবার ‘কাকবেলীয়’ ঘটনা হলো, শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতের সঙ্গে ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁদের বক্তব্য সিনেমা শুরুর আগে পর্দায় ভেসে ওঠা সেই ঘোষণা মনে করিয়ে দেবে: ‘এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই, কেউ যদি মিল খুঁজে পান তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ঘটনা মাত্র।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি থাকে। তাঁরা সেখান থেকে রোববার বিদ্যালয় ছুটি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত শীতে শিশুশিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। সেই কারণে প্রধান শিক্ষকেরা ওই দিন সংরক্ষিত ছুটি নিয়েছেন। এই ছুটির দিনে সব শিক্ষক কেন প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে গেলেন—তার জবাবে তিনি বলেছেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে যে কোনো শিক্ষক যে কোনো দাওয়াতে যেতে পারেন। তিনি নিজেও ওই দাওয়াতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায় বোঝা যাচ্ছে, মন্ত্রীর ছেলের বউভাতের সঙ্গে এতগুলো স্কুলে ছুটি দেওয়ার মধ্যে যদি কেউ যোগসূত্র খুঁজতে যান, সেটা তাঁকে নিজ দায়িত্বে খুঁজতে হবে। এর জন্য কর্মকর্তাদের দায়ী করা যাবে না।