কোভিডে আক্রান্ত মো. মোশারফ হোসেন সুফেলকে গত বছরের ৪ এপ্রিল ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দুই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মারা যান। এর জন্য দুই চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ আনে সুফেলের পরিবার। সে বছরের ২৯ জুন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তা নিষ্পত্তি হয়নি। সুফেলের মেয়ে সানজিদা হোসেন পিউ বলেন, ‘অভিযোগ দিয়েছি দেড় বছর হয়। বিএমডিসি আমাদের ও অভিযুক্তদের কয়েক দফা ডেকেছে। কিন্তু এখনো কোনো ফল হয়নি।’
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ বাড়লেও বিএমডিসি অভিযুক্ত চিকিৎসকদের শাস্তি দিতে উৎসাহ দেখায় না। এমন অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর। অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নিষ্পত্তিতে গতি নেই। ফলে অভিযোগ দিতে ভুক্তভোগীদের উৎসাহও কমছে। বিএমডিসি সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে বিএমডিসিতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ জমা পড়েছে, তার ৭৬ শতাংশই ঝুলে আছে। মাত্র ২৪ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগেও সর্বোচ্চ শাস্তির (নিবন্ধন বাতিল) নজির নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএমডিসির পক্ষ থেকে অভিযোগকারীকে সমঝোতার জন্য প্রভাবিত করারও অভিযোগ আছে।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএমডিসি সর্বোচ্চ নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে কোনো চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে বিভিন্ন মেয়াদে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়।
একজন চিকিৎসকের এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? অনেক সময় ঘটনা আদালতে গড়ায়। সেখানে অভিযুক্ত চিকিৎসক শাস্তি কমানোর আবেদন করে মাফ পেয়ে যান।’
শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডা. সামসুল আরেফিনের বিরুদ্ধে গত ২৫ আগস্ট চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ আনে এক রোগীর পরিবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ অক্টোবর রোগীর বাবা শেখ জসিমউদ্দিন কবির এবং অভিযুক্ত চিকিৎসককে ডাকা হয় বিএমডিসিতে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের মুখোমুখি হতে রাজি হননি ডা. সামসুল আরেফিন। পরে বিএমডিসি আলাদাভাবে দুই পক্ষের বক্তব্য শোনে। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।
শেখ জসিমউদ্দিন কবির গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএমডিসিতে অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য চাপ দিয়েছে। এমনকি বিএমডিসির যে প্যানেল এই বিচার করবে, সেখানকার একজন এ কাজে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আমাকে দমাতে চেয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘শেষমেশ উচ্চ আদালতে রিট করেছি। ইতিমধ্যে রুল জারি হয়েছে।’