বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে মুদ্রাবাজারের ভবিষ্যৎ গতিনির্ধারক হয়ে উঠছে স্বর্ণ। রিজার্ভে স্বর্ণের মজুদ ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাশিয়ার ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্বিপাক দেশে দেশে স্বর্ণকে নিয়ে এসেছে আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর রিজার্ভের বড় একটি অংশ এখন গড়ে উঠছে স্বর্ণের মজুদ দিয়ে, যা সামনের দিনগুলোয় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এছাড়া আপত্কালীন বিনিয়োগ হিসেবেও এখন স্বর্ণে অর্থ লগ্নির পথে ঝুঁকছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণী সংস্থাগুলো।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে স্বর্ণ মজুদ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এদিক বৈশ্বিক তালিকায়ও দেশটি রয়েছে নবম স্থানে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মজুদে স্বর্ণ রয়েছে ৭৮৫ টন। প্রতিবেশী দেশটির অবস্থান ভালো হলেও রিজার্ভে স্বর্ণ মজুদের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ, তালিকায় ৬০-এরও পরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ ১৪ টন। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণ মজুদের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৬৫ ও ২১ দশমিক ৮৭ টন। নেপাল ও শ্রীলংকায় এর পরিমাণ যথাক্রমে ৭ দশমিক ৯৯ ও ৬ দশমিক ৭ টন।
আদিকাল থেকেই স্বর্ণ মজুদকে ধরা হয় যেকোনো দেশের আর্থিক সক্ষমতার একটি বড় মাপকাঠি হিসেবে। বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী ধাতুটির ক্রয় বা বিক্রয় বাড়িয়ে তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। আপত্কালীন বিনিয়োগ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন স্বর্ণ মজুদ বাড়াতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে মূল্যবান ধাতুটির মজুদ রয়েছে ৩৫ হাজার টনেরও বেশি। সব মিলিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত উত্তোলিত স্বর্ণের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে। চলতি বছরেও বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের সবচেয়ে বড় নিট ক্রেতা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।