ক্ষমতার বাইরে থাকলে বিদেশিদের কাছে নালিশ করা, ক্ষমতাসীনদের নানা অপকর্মের বয়ান তুলে ধরা, মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়া ইত্যাদি আমাদের রাজনীতির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আমাদের দেশের বিরোধী দলের কাছে বিশেষ মর্যাদা পান। বিরোধী দল তাদের ত্রাতা মনে করে। বিরোধী দলের এই মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিবিদদের অকাতরে নাক গলাতে দেখা যায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলেছেন অনেক দিন ধরে। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের সময় কূটনীতিকদের প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। পরে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতার নামে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে। কখনো কখনো তারা আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন।
কূটনীতিকদের অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শিষ্টাচারবহির্ভূত একটি কাজ। তবে শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কূটনীতিকরা যেমন একদিকে দায়ী, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান না থাকাও সমানভাবে দায়ী। সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর জনসমর্থনে ঘাটতি থাকে বিধায় নির্বাচন এলেই তারা মনে করে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। ফলে বিদেশি বিভিন্ন শক্তির ওপর নির্ভরতা তাদের বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে সাহায্য প্রত্যাশা করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার জন্য।
গত ১৩ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার ফলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, লম্বা সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দলের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দলের নেতাদের মধ্যেও এক ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া দলে রয়েছে নেতৃত্বের সংকট। দলে একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুরক্ত। অন্যদিকে দলের মধ্যে একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী রয়েছে যারা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পরিচালিত হয়। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক ধরনের নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। যেহেতু ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, অতএব এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে।