বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হতাশার কথা থাকলেও আমি দিনশেষে আশাবাদী হয়েই বাঁচি। আমার দেশ, আমার মাটি কখনও আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। যখন যা চাই তা হয়তো সহজে পাই না কিন্তু দেশের প্রতি প্রত্যাশার সবটা একসাথে না হলেও কখনও আশাহত হতে দেয় না। সয়াবিন তেলের সংকটে যখন আমরা দিশেহারা। বাজারে তেল সংকট। মজুতদারদের সিন্ডিকেশন। টাকা থাকলেও তেল না পাওয়া আবার বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্য হয়তো কমে যাচ্ছে চাহিদা মোতাবেক তেলের জোগাড় করতে করতে।
দেশে দৈনিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ৫ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন। এই বিপুল চাহিদার পুরোটাই আসে দেশের বাইরে থেকে। কাঁচামালের বিদেশনির্ভরতা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানোয় সরকারকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সামর্থ্য থাকলেও তেল পাচ্ছে না আবার সামর্থের অভাবে ন্যূনতম তেলটাও জুটছে না এমন অবস্থায় যখন সংবাদ ছাপা হয় যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলাফল পাচ্ছে, তখন আশাবাদী হবো না তো কী?
আমাদের ছোটবেলায় কিন্তু সরিষা তেলের ব্যবহার দেখেছি। সয়াবিনের প্রচলন থাকলেও সেটা ছিল মোটামুটি সামর্থ্যবানদের ঘরের বিষয়। আমাদের বাসায়ই আমরা পাম ওয়েলের ব্যবহারও দেখেছি। আমার আব্বা ঢাকা থেকে বাসায় যাওয়ার সময় প্রতি মাসে একটা করে সাদা পামওয়েলের বয়াম নিয়ে যেতেন। তখন সদ্য বাংলাদেশের বাজারে পামওয়েলের আগমন। তবে সেটাও ব্যবহার করা হতো বিশেষ রান্নায়। পরোটা ভাজায়। ধীরে ধীরে সয়াবিন তেল সবার রান্নাঘর দখল করে নিলো। সরিষা তেল হয়ে গেলো শখের পণ্য। ভর্তাকেন্দ্রিক স্থায়ী হলো এর ব্যবহার।
তবে এটা ঠিক যে সরিষা তেল সয়াবিনের চেয়ে খারাপ এমন কোনো গবেষণার ফলাফলে আসেনি। শুনেছি সরিষা তেল সয়াবিনের মতো হৃদরোগের কারণ হয় না। সরিষা তেলের দাম এখন একটু বেশি কিন্তু এর পরিমাণ রান্নায় সয়াবিনের মতো বেশি লাগে না। আবার অন্যদিকে সরিষা তেলের জোগানও কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবেই নিশ্চিত করা সম্ভব। বর্তমানে দেশে বীজের চাহিদা বা অন্যসব প্রয়োজন মেটানোর পর প্রায় ৫ লাখ টন সরিষা ব্যবহার হয় তেল উৎপাদনের জন্য।