বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তি হলো। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আজকের দিনে তাই পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি মুক্ত স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি।
স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এখন সময় এসেছে আমাদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তিগুলোর নির্মোহ মূল্যায়ন করার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আমরা কী ধরনের বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম এবং অর্ধশতক পর আমরা কী পেয়েছি? ১৯৭১ সালে আমাদের স্বপ্নগুলো কী ছিল? সেই লক্ষ্যে আমরা কতদূর এগিয়েছি? জাতি হিসেবে বাংলাদেশের যেভাবে এগোনোর দরকার ছিল, সে তুলনায় আমরা কতদূর এগোলাম, কোথায় আমাদের সফলতা, আর ব্যর্থতাই-বা কোথায়।
একাত্তর সালে দেশটা যখন শত্রুমুক্ত হলো, আমরা এ দেশটার মালিক হলাম; তখন কিন্তু এ দেশ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত জাতি ছিল। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে দোষারোপ করা হয় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলার জন্য; কিন্তু সেই সময় তাঁর মতো অনেকেই ভেবেছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা কঠিন হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি অতিদরিদ্র দেশ, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেই দেশ যে স্বাবলম্বী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে, এটা অনেকের কাছে অসম্ভব ব্যাপার ছিল।
আমরা যদি একাত্তর সালের দিকে ফিরে তাকাই এবং আজকের বাংলাদেশকে দেখি, তাহলে দেখব, আর্থসামাজিক মানদণ্ডের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেছে। বিশেষত, বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। এক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬-৭ শতাংশ হয়ে আসছে, যা বিশ্বের খুব কম দেশই দেখাতে পেরেছে। দারিদ্র্যের যে হার স্বাধীনতাকালে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ছিল, এখন তা ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার ১৯৭১ সালে যেখানে ছিল প্রতি হাজারে ২১০, তা এখন নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ২২ জনে। প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর হার ২০০০ সালে যেখানে ছিল প্রতি হাজারে ৪৩, তা দুই দশকে কমে ২৩ দশমিক ৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু ক্যালরি প্রাপ্তি ১৯৭২ সালে ছিল ১ হাজার ৮০০, তা বর্তমানে ২ হাজার ২০০ ক্যালরির ওপরে। বাংলাদেশে যেসব রোগ মহামারিরূপে প্রতিবছর দেখা দিত, যেমন কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও গুটি বসন্ত; সেগুলো এখন সম্পূর্ণ অথবা প্রায় সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গেছে। অতিসম্প্রতি কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক অতিমারিতে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ কীভাবে এই দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। স্বাস্থ্যমান বৃদ্ধির ফলে আমাদের গড় আয়ু বেড়ে এখন ৭২ দশমিক ৮৭ বছর, যা পাকিস্তান, ভারত বা নেপালের চেয়ে বেশি।