মামুন রশীদ প্রথিতযশা ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্নেষক। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০১ সাল থেকে প্রায় এক দশক তিনি সিটিব্যাংক এনএতে কাজ করেন; তিনি ছিলেন ব্যাংকটির বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় প্রধান নির্বাহী। এর আগে সাড়ে আট বছর কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ঢাকায় ও ভারতের মুম্বাইয়ে কাজ করেন এএনজেড গ্রিন্ডলেইস ব্যাংকে। ব্যাংকিংয়ে অভিনবত্ব ও উৎকর্ষের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের 'করপোরেট এক্সিলেন্স' অ্যাওয়ার্ড মামুন রশীদ যুক্তরাজ্যের হেনলি বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৯৭ সালে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রকাশনায় ব্যাংকিং এবং সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে ছাপা হয়েছে তাঁর অনেক লেখা ও সাক্ষাৎকার। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সমকাল: ব্যাংক খাত নিয়ে সাম্প্রতিক খবর মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তাঁদের আমানত তুলে ফেলছেন। আমানত তুলে ফেলার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে কি?
মামুন রশীদ: অনেকটা লাগামহীন মূল্যস্ম্ফীতি, ডলার সংকটসহ বৈশ্বিক মন্দার আভাস ইত্যাদির সম্মিলিত প্রভাবে ভবিষ্যতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে- এমন ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে ফেলার ভাবনায় তাড়িত হয়ে থাকতে পারেন। এটি ব্যাংকের তারল্য বা নগদের সংকট নয়, বরং আস্থার সংকট। সেই সঙ্গে অবশ্য রয়েছে ভালো ব্যাংক ও খারাপ ব্যাংকের পার্থক্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ফলে ভালোভাবে পরিচালিত ব্যাংকে আমানতের সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কি চাইলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকে নগদ টাকা সরবরাহ করতে পারে? আমানতকারীরা যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ ও সঞ্চয় জমা রেখেছেন, তাঁদের সেবার গ্যারান্টি বাংলাদেশ ব্যাংক আগ বাড়িয়ে কেন দিচ্ছে? কেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরা আমানতের নিরাপত্তার ব্যাপারে গ্রাহক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে না?
সমকাল: এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী?
মামুন রশীদ: এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই বলে সতর্ক করা- তারা যাতে মাঝারিসহ বড় চেক অনার করার সময় গ্রাহক হয়রানি না করে। যে কোনো নগদায়নকে সহজ করে; কোনো ব্যাংক যাতে প্রবেশপথ বা অর্থ উত্তোলন বুথের সামনে লিখে না রাখে- এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে এক কর্মদিবস আগে জানাতে হবে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি নগদায়নে যাতে গড়িমসি করা না হয়, গ্রাহকদের যেন না ঘোরায়। কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকের কর্মকর্তার খারাপ আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব আকারে ছড়িয়ে গেলে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে টাকার বিনিময়ে যে সেবা চান, তাঁকে সেই সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নিজের রেগুলেটরি ক্ষমতা পোক্ত করা, ব্যাংকিং সেবা কিংবা অর্থ উত্তোলনে হয়রানি হচ্ছে কিনা, সেসব যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া। গ্রাহক যদি বুঝতে পারেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক সময়ে সঠিক নিয়ন্ত্রণ করছে না, তাহলে তারল্য সংকট না থাকলেও আস্থার সংকট কিছুতেই কমবে না।