মধুপুরের মোহন মিয়া তখন মধ্যপর্যায়ের মাতব্বর, লেখালেখিতে মাঝ গাঙে, সারা গাঁয়ে তখন এদিক-সেদিক তাকানোর মাতম চলছে। ওস্তাদরা বলছেন হয় ডান নয় বাম একটা পক্ষে যেতে হবে, নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে নিজেকে উভয় পক্ষ থেকে ছোড়া তীরে বৈষম্য বঞ্চনা বেড়াজালে আটকানো মানে নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণা। এটা কি ঠিক, এ প্রশ্ন উঠছে। মোহন মিয়া ভাবল এদিক-সেদিক তাকানোর জন্য যে চশমা দরকার তা তো তার নেই। গাঁয়ে ইতিমধ্যে মাঝামাঝি তাকানোর জোর দাবি উঠছে। সবাই বলছে এদিক কিংবা সেদিক কোনো দিকেই ভরসা নেই। যে যায় লঙ্কায় সেই হয়ে যায় রাবণ। মোহন মিয়া এ পক্ষেও না ও পক্ষেও নাসে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা শুরু করল। খোদ নিরপেক্ষতারই পায়ের তলায় মাটি রাখেনি পক্ষ-বিপক্ষের লোকেরাই।
কিন্তু মোহন মিয়ার আকিঞ্চন আকাক্সক্ষা, তার বড় শখ ও স্বপ্ন একদিন নাতিশীতোষ্ণতার সুবাতাস বইতেই হবে মধুপুরের মৌবনে। মধুপুরের গ্রামটাকে সোনার গাঁ বানানোর কথা যারা বলেন তারা আসলে দেখা গেল মাছ চাষের লক্ষ্য যেমন থাকে মাছগুলোকে খাওয়ার জন্যই, মাছ সত্যিকার অর্থে হৃষ্টপুষ্ট হোক, সুস্বাদু হোক, তাদের সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে, এটা যারা চায় না তাদেরই তর সয় না পাছে অপর পক্ষ তা সাবাড় করে ফেলে। সুতরাং মাছের বংশবৃদ্ধি নয় মোটামুটি খাওয়ার মতো হলেই মাছ ধরো আর খাও। মোহন মিয়া দেখে সোনার গাঁকে সোনা তো দূরের কথা রৌপ্যের পর্যায় পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না কেউ। চারদিকে শুধু খাই খাই ভাব। যে যখন যেভাবে পারে সবাই খাওয়ায় ব্যস্ত। গাছ বড় হতে দেয় না। মাছ বড় হতে দেয় না। অগত্যা মোহন মিয়া ভাবল সে কোনো পক্ষ নেবে না। খাওয়াতেও না পাওয়াতেও না।