গত ২৮ নভেম্বরের গণমাধ্যম সূত্রমতে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক পরিদর্শনে ইসলামি ধারায় পরিচালিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের নন ফান্ডেড বিনিয়োগে (ঋণ প্রদানে) ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে, যা পূর্বের আলোচিত কেলেঙ্কারিকেও হার মানিয়েছে।
ব্যাংকটি বন্ডেড ওয়্যারহাউজের লাইসেন্সবিহীন দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৯ কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯২ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধিমোতাবেক একক গ্রাহকের সীমা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ রয়েছে। শুল্ক সুবিধাভুক্ত ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানির বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। এমনকি কারখানায় পাওয়া যায়নি আমদানিকৃত কাঁচামাল কিংবা কাঁচামাল থেকে প্রস্তুত কোনো পণ্যের মজুত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকলে এত বড় অনিয়ম সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ থাকায় এ অর্থ আদায়ে মারাত্মক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রতিষ্ঠান দুটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি সরকারি সুবিধায় শুল্কছাড়ের অপব্যবহার করেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বড় অঙ্কের এ টাকার একটা অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন সাবেক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘ব্যাংক এলসির মাধ্যমে আমদানির দায়িত্ব নিয়ে থাকে। তবে এজন্য আইন ও শর্ত মানতে হয়। ব্যাংকের প্রথম ও মৌলিক দায়িত্ব হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলার আগে তার লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন ও মেয়াদ হালনাগাদ আছে কি না, তা যাচাই করা। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর-ভ্যাট ও ব্যবসা সনদ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া। বন্ডেড ওয়্যারহাউজ হলে সে সংক্রান্ত সনদ ও মেয়াদ, কারখানার অবস্থানের খোঁজ নেওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য নিয়মিত তদারকি করা। পেমেন্ট করার আগে ব্যাংককে অবশ্যই দেখতে হবে এলসির পণ্য দেশে আসছে কি না, নাকি শুধু শুধু টাকা বিদেশে যাচ্ছে। আর ব্যাংক টাকা দেয় বলে সেটা দেখার দায়িত্ব ব্যাংকেরই। এলসিতে অনিয়ম হলে বা পাচারের মাধ্যমে টাকা বিদেশে গেলে সে দায় ব্যাংক এড়াতে পারে না। পরের দায়িত্ব হলো, লাইসেন্সদাতা প্রতিষ্ঠান এনবিআরের। তাদের দায়িত্ব কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিয়ে কী করছে, তা তদারকি করা।’ বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) অডিট রিপোর্টের তথ্যমতে, সরকারি অর্থের অনিয়মের অর্ধেকই হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৩১ হাজার কোটি টাকাই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের। অর্থাৎ আর্থিক অনিয়মের ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশ হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে। বিগত ৯ বছরে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ গুণ।