কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের একটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে গত ২৬ নভেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই লেনের এই টিউবটি জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।
দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই হবে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি প্রকল্পটির বড় সমর্থক এই কারণে যে, এতে দীর্ঘ মেয়াদে এর সুদূরপ্রসারী ও বহুল বিস্তৃত ব্যবহার অর্থনীতিতে যুগান্তকারী উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে কয়েক বছর টানেলটি স্বল্প ব্যবহূত হবে। এই টানেল নির্মাণে মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। যে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে। টানেলের নির্মাণকাজে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারাও কয়েকবার প্রকল্পের নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। মনে হতে পারে, টানেলটি বাংলাদেশের আরেকটি 'সাদা হাতি' প্রকল্পেরই নজির। কারণ, প্রথম কয়েক বছর এই টানেলটি স্বল্প ব্যবহূত (আন্ডার-ইউটিলাইজড) সড়কপথ হিসেবে থেকে গেলে এই টানেলের টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা যাবে না।
এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় নিতেই হবে। বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর ভাটি অঞ্চলের ২০ কিলোমিটারে আর কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে। অতএব, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাংগু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়ে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে। আনোয়ারা এবং বাঁশখালী চট্টগ্রামের সবচেয়ে অনুন্নত দুটি উপজেলা হয়ে রয়েছে, যদিও আকাশপথে এ দুটি উপজেলা চট্টগ্রাম নগরী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী। এই ভৌগোলিক কারণেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সম্প্রসারিত হয়নি। যদিও কর্ণফুলী নদীর খাড়ি দক্ষিণ তীরেই বয়ে যাচ্ছে। মানে, কর্ণফুলী নদীর স্রোত দক্ষিণ তীরেই বেশি এবং নদীর গভীরতাও দক্ষিণ তীরে অনেক বেশি।