‘মামলার পর থেকে বাড়িতে থাকতে পারি না। সন্তানের মুখ দেখতে পাই না। পরিবার ছেড়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’ বলছিলেন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আমসরা ইসলামিয়া দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক ও তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার।
তাড়াশে গত ২৯ নভেম্বর রাত ৯টায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপির ১৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন। সেই মামলায় শাহ রেজা সেতারসহ ১৪ আসামি গতকাল বুধবার আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে এসেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বেলা দুইটার দিকে শাহ রেজা সেতার প্রথম আলোকে বলেন, হামলা বা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পুরো বিষয়টি সাজানো। যে সময়ে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন। মামলার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ঘুরে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মীকে পাওয়া যায় যাঁরা আগাম জামিন নিতে এসেছিলেন। এর মধ্যে ছয়টি উপজেলার অন্তত ২৫ নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের নামে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার ধরন মোটামুটি একই—ককটেল বিস্ফোরণ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগ। মামলাগুলোর বাদী পুলিশ অথবা আওয়ামী লীগের নেতারা। এজাহারে অনেকের নাম দেওয়া হয়েছে। আবার অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে যাঁকে ইচ্ছা হয়রানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের আইনজীবী ও দলটির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ২৫টির মতো মামলায় আগাম জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। সেগুলোতে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়েছে। আদালত জামিন আবেদনের আদেশের জন্য আগামী রোববার ধার্য করেছেন। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান।
বিএনপি দাবি করছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে তাঁদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিচ্ছেন। বিশেষ অভিযানের নামে পুলিশ ঢাকায় গণসমাবেশের আগে তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন।