১৯২২ সালে প্রবর্তিত আয়কর আইনের পথ পরিক্রমা এবং সময়ের অবসরে তার অবয়ব অনুভবে যে পরিবর্তন এসেছে, এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক শ বছরে করদাতা ও কর আহরণকারীর মধ্যকার মনোভঙ্গিতে ইতিবাচকতার পরিবর্তে নেতিবাচকতাই বেড়েছে। আর সেই বৃত্তের বাইরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এখনো প্রস্তাব প্রণয়নের পর্যায়ে। আইনপ্রণেতার নয়, বাস্তবায়নকারীর হেঁশেলে। ১৯২২ সালের ভারতীয় আয়কর আইনের অর্ধেক বয়স কেটেছে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ও তদানীন্তন পাকিস্তানে এবং বাকি ৫০ বছর পার হয়েছে স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে। অনেকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, শেষের দুই দশকে বাংলাদেশে আয়কর আদায়ের (আহরণ নয়) পরিমাণ যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী এবং যারপরনাই গতিশীল। কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন, তা তো কর জিডিপি অনুপাতের মরাকটাল অবস্থা দেখলে বোঝা যায়।
দুই দশকে আয়কর আহরণ নমিনাল টার্মে বেশ বাড়লেও তা অর্থনীতির আকার-আয়তন বপু ও বিকাশের সঙ্গে সমতালে অর্জিত হয়নি। তা-ই যদি হতো, তাহলে ট্যাক্স জিডিপির অনুপাতে এমন বেচাইন পরিস্থিতি দেখা যেত না। তা-ই যদি হতো, তাহলে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অর্থনীতিতে বৈষম্য এমন প্রকট হতো না। তা-ই যদি হতো, ব্যাংকে ইচ্ছুক ও সুচতুর ঋণখেলাপির দাপট বাড়ত না, এমনকি এত টাকা বিদেশে পাচারের সুযোগ বাড়ত না, পুঁজির সংকট ও বেকার জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ অথচ মধ্যম আয়ের দেশে হাঁটা একটি ‘উদীয়মান’ দেশ ও অর্থনীতির। সুশাসন ও জবাবদিহির পাল ছিঁড়ে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ তরণি টলটলায়মান হতো না। নীতিনৈতিকতা এড়িয়ে-মাড়িয়ে দেশ, সমাজ ও অর্থনীতিতে বিপুল বৈপরীত্য ও বৈষম্য বিরাজ করত না। আয়বৈষম্যেও সূচক গিনি সহগের ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা এমন পর্যায়ে যেত না।