১৯৭০-এর দশকে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মতাদর্শকেন্দ্রিক আলোচনা ও তার ভিত্তিতে বিভাজন তখন তুঙ্গে। ফিরে তাকালে বুঝি, শিক্ষাঙ্গনে বিষয়ভিত্তিক বিভাজনের মাত্রাও সে সময় থেকে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার বিভাগভিত্তিক বিভাজন হতে আশি বা নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত লেগেছিল। নব্বইয়ের দশককে এ পরিবর্তনের উত্তরণকাল হিসেবে গণ্য করলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে প্রথম দুই দশকের সমাজবিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞানচর্চায় অনেক বেশি দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি ও মতাদর্শের সম্পৃক্ততা ছিল। সে সময়ে জ্ঞানচর্চায় গোঁড়ামি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে কোনো না কোনো মতাদর্শের যোগসূত্রতাকে স্বতঃসিদ্ধ মনে করা হতো। আজকের (২০২২-২৩) তরুণ ছাত্রছাত্রী, যারা সংখ্যারূপী তথ্য বিশ্লেষণের নানা উপায় শিখে অনেক সময় ইকোনমেট্রিকসকেই অর্থনীতি বিষয় হিসেবে গণ্য করে, তাদের কাছে সেদিনকার তরুণদের এ জাতীয় সরলীকরণ হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু ওই মতাদর্শের টানেই অনেকে সমাজের চাকাগুলো এগিয়ে নিয়েছিল এবং সে প্রক্রিয়ায় নিজেদেরও জ্ঞান ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছিল।
এ নিবন্ধে দুটো প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে গবেষণার লক্ষ্য ও গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে। লক্ষ্য স্থির না হলে গবেষণাকর্মের মূল্যায়নের কোনো মাপকাঠি থাকবে না। অন্যদিকে কেউ কেউ নিজের পছন্দমতো লক্ষ্য চিহ্নিত করে বিশ্লেষণে স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্রয় দিতে পারেন। দুটো প্রেক্ষিত থেকে গবেষণা পদ্ধতি আলোচনায় প্রাসঙ্গিক: (ক) অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যেসব তত্ত্বকাঠামো রয়েছে, সেসবের মাঝে সর্বোত্কৃষ্ট কোনটি? (খ) আমাদের দেশের বিবিধ সমস্যার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য উপযোগী তত্ত্বকাঠামো কোনটি? লক্ষণীয় যে ‘সর্বোত্কৃষ্ট’ অথবা ‘উপযোগী’, লক্ষ্যবিহীনভাবে নির্ধারণ সম্ভব নয়। সে কারণেই গবেষণার লক্ষ্য ও পদ্ধতি বিষয় দুটোকে একসঙ্গে উত্থাপন করা হয়েছে।