বোকারা নয়, বুদ্ধিমানরা যখন আশাবাদী হয় তখন তার চেয়ে সুন্দর কিছু আর হয় না; যে কারণে অমন লেখা পড়তে ভালোবাসি। টগবগে তরুণ আশাবাদীদের একটি সংকলন পড়েছিলাম সেদিন। অনেক ভালো ভালো লেখা আছে, আর ফাঁকে ফাঁকে মূল্যবান উদ্ধৃতি রয়েছে কালজয়ী লেখা থেকে। অন্তত তিনটি উদ্ধৃতি চমকে দিল আমাকে, একটি শিবদাস ঘোষের, দুটি স্বামী বিবেকানন্দের।
শিবদাস ঘোষ সম্পর্কে জানি, তিনি পশ্চিমবঙ্গে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টারের নেতা ও তাত্ত্বিক ছিলেন, কম বয়সে পরলোকগমন করেছেন। তাঁর উদ্ধৃতিটি ইংরেজিতে। শিবদাস ঘোষ ইংরেজিতে লিখলেন কেন জানি না, নিশ্চয়ই কারণ ছিল। তাঁর উদ্ধৃতিটির বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘যদি মরতেই হয়, ভিক্ষুকের মতো মরবে না, নিজেকে অপমান করে মরবে না। মরতে হলে সম্মানের সঙ্গে মরবে এবং সম্মানের সঙ্গে মরবার একটি নিশ্চিত উপায় আছে, সে হচ্ছে সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবার লক্ষ্যে জনগণের বৈপ্লবিক সংগ্রামে অংশ নেওয়া। ’ তরুণদের জন্য এর চেয়ে সুন্দর বক্তব্য আর কী হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি আবার অন্য কথাও। এই মৃত্যুমুখিতা কেন, জীবনের পরিবর্তে? কেন বলব মরতে হলে এভাবে মরো? কেনই বা বলব মরে তুমি মৃত্যুকে জয় করো? মানুষের জীবন তো একাধিক নয় যে বলা যাবে একটি চলে গেলে ক্ষতি নেই, ভয় নেই কোনো, আরো তা রইল, সেগুলো নিয়ে বাঁচো। তাহলে?
না, মৃত্যুকে উজ্জ্বল, আকর্ষণীয় এবং ইহলোকের ক্ষতিপূরণ বলে মহান করে তোলা উচিত বলে আমি মনে করি না। সত্য বটে, সব মৃত্যু সমান নয়, কোনো কোনো মৃত্যু অত্যন্ত গৌরবের এবং প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকে ভয় করে চলি যদি, তাহলে কোনো মহৎ কাজই করতে পারব না। অবশ্যই মানব এ কথা; কিন্তু তাই বলে তরুণকে বলব না, যাও তুমি প্রাণ দিয়ে এসো। বরং বলব, এসো এমন ব্যবস্থা আমরা সৃষ্টি করি যাতে সম্মানের সঙ্গে মানুষের মতো আমরা বাঁচতে পারি। সেই কাজে নামো তুমি। বাঁচার প্রয়োজনে পুরনো ব্যবস্থা ভাঙো তুমি, নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলো জীবনের প্রয়োজনে। জীবনের চেয়ে মহৎ কিছু নেই। তবে জানবে তুমি যে সব জীবন জীবন্ত নয়। জীবনকে জীবন্ত করতে হলে ঝুঁকি নেওয়া চাই, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত। কাপুরুষ হবে না তুমি। কিন্তু তাই বলে মারা যাওয়ার পথ খুঁজতে পরামর্শ দেওয়াটা ভুল। বিপ্লবী হওয়া কঠিন, শহীদ হওয়ার চেয়ে। আত্মহনন অনেক সহজ, শত্রুহননের তুলনায়।