ক্ষমতাবানদের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক না থাকলেও আমরা অকারণে তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করি। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কুটুম্বিতা-বিচার' নামে একটি কবিতা রয়েছে। মাটির প্রদীপ এবং কেরোসিনের শিখা দুজনেই সমপর্যায়ভুক্ত। দুজনেই গরিরের ঘরে রাতের অন্ধকার দূর করে। কিন্তু মাটির প্রদীপ থেকে কেরোসিনের দীপ একটু আধুনিক। তাই মাটির প্রদীপ কেরোসিনের দীপকে ভাই বলে সম্বোধন করলে কেরোসিনের দীপের আত্মসম্মানে লাগে।
কেরোসিনের দীপের কাছে মাটির প্রদীপের সাথে সহজাত সম্পর্ক লজ্জার। তাই সে মাটির প্রদীপকে ভাই বলে ডাকতে নিষেধ করে। আবার এই বলে সাবধান করে যে, মাটির প্রদীপ যদি কেরোসিনের দীপকে ভাই বলে ডাকে তবে তাকে গলা টিপে দেবে। পরক্ষণেই আকাশে চাঁদ উঠলো।
চাঁদের আলোয় অন্ধকার আলোকিত। তখন আকাশে আলোকিত চাঁদকে দেখে কেরোসিনের দীপ গায়ে পড়ে বলে, ‘এসো মোর দাদা!’ অর্থাৎ কেরোসিনের দীপ সমজাতীয় মাটির প্রদীপের ভাই হতে চায় না; সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে আকাশের চাঁদের ভাই হতে চায়। এটাই বাস্তবতা। চরিত্রগুলো রূপক হলেও, এর বাস্তবতা সত্য।
“কেরোসিন-শিখা বলে মাটির প্রদীপে,
ভাই ব’লে ডাক যদি দেব গলা টিপে।
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা—
কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা!”
ক্ষমতাবানদের পেছনে দৌড়ানোর এই বিষয়টি শুধু মানুষ নয়, পশুপাখির জীবনেও দেখা যায়। একটা সুন্দর উদাহরণ দেওয়া যায়। একটা চিল এক টুকরা মাংস মুখে নিয়ে আপন মনে উড়ে যাচ্ছে। সে মাংসের টুকরা দেখে অন্য চিলেরা, সেই চিলের পেছনে মাংসের লোভে দৌড়াতে শুরু করলো। মাংসের টুকরা মুখে নিয়ে চিলও উড়ছে, অন্য চিলেরাও দৌড়াচ্ছে।