নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির ফলে ওএমএসের ট্রাক থেকে সাশ্রয় দরে চাল-আটা কেনার দীর্ঘ লাইন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম। আবার ওএমএসের ট্রাকেরও কোনো শিডিউল ঠিক থাকে না। দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষকে তাই কাজ ফেলে ভোর থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো চাল-আটা না নিয়েই ফিরতে হয় অনেক মানুষকে। তারপরও তাঁরা দিনের পর দিন লাইন ধরে অপেক্ষা করেন, কখনো ট্রাক এলে ঠেলাঠেলি-হুড়োহুড়ি করে চাল-আটা সংগ্রহ করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য অনুসারে, অতিদরিদ্র মানুষের আয়ের ৩২ শতাংশ ব্যয় হয় চালের পেছনে। বাজারে চাল-আটাসহ সব নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের পক্ষে মাছ-মাংস বাদ দিয়েও সংসার চালানো মুশকিল হয়ে গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতেও এক কেজি মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩০ টাকা, এখন ৫৫ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। আর আটার দামও এই বছরের শুরুতে ৩০ টাকা ছিল, যা এখন ৬৫ টাকার বেশি। এই সময় ওএমএসের ট্রাক থেকে কিছুটা সস্তায় চাল-আটা কিনতে পারলে সাশ্রয় হওয়া টাকা অন্য খাতে ব্যয় করতে পারে মানুষ। সেই কারণে বাধ্য হয়ে চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে সব কাজ ফেলে ওএমএসের ট্রাকের অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সেই মূল্যও দফায় দফায় বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০০ টাকার আশপাশে ছিল, এখন তা ১৯০ টাকা। ২০২০ সালে যে চিনির দাম ৬৮ টাকা ছিল, তা এখন ১০৮ টাকা। এক দিকে নিত্যপণ্যের মূল্যের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, অপর দিকে কমদামে দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষদের পর্যাপ্ত পরিমাণে এসব নিত্যপণ্য সরবরাহেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেই। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরও ‘ডিজিটাল’ হিসেবে বিজ্ঞাপিত বাংলাদেশে আর্থিক, সামাজিক অবস্থাভেদে নাগরিকদের নির্ভরযোগ্য তালিকা সরকারের কাছে নেই।