সাধারণত দেখা যায় স্মৃতিচারণমূলক বইয়ে ব্যক্তি নিজেকে জাহির করেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজের গুণগান করেন। এমন বই পড়ে শেষ করা পাঠককে টানে না। কিন্তু মাহবুব তালুকদারের ‘আমলার আমলনামা’ ব্যতিক্রম। দুদিনে পড়ে শেষ করেছিলাম। বইয়ে প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কথাগুলো লিখছেন, বাড়িয়ে কিছু বলছেন মনে হয়নি। মাহবুব তালুকদারের ‘আমলার আমলনামা’ সরকারি কর্মজীবনের অন্তরঙ্গ আলাপ। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ের নানান ঘটনা নিয়ে বয়ান করেছেন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাকে বঙ্গভবনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেন এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বদান্যতায় তিনি ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পালনের সময় লেখক যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারই আলেখ্য এই বইটি। এতে আছে প্রশাসনের অনেক ছোট-বড় ঘটনা, পাঠকের কৌতূহল মেটানোর মতো বিচিত্র উপাদান; নিখুঁত চোখে ঘটনা পরম্পরার উপস্থাপন করেছেন।
লেখক ও শিশুসাহিত্যিক মাহবুব তালুকদারের ‘আমলার আমলনামা’ প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। প্রথম প্রকাশ হয়েছে ২০০৯ সালে। উৎসর্গ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। উৎসর্গে যুক্ত করেছেন এই বাক্য ‘যিনি আমাকে ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিয়োগের ঘটনা থেকে বইটির মোড় অন্য দিকে ঘুরে গেছে। বাংলাদেশের চাকরিবিধিতে মাহবুব তালুকদারের আমলা হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। তিনি আমলাতন্ত্রের ভেতর দিয়ে না গিয়ে ক্যাডার হয়েছেন বহির্ভূতভাবে উপসচিব হিসেবে। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ইতিহাসে তা এক বিরল ঘটনা। আর তার জন্য তাকে অনেক কাঠখড়ও পোড়াতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে বহু যন্ত্রণা। সব ব্যথা কি আর মানুষ প্রকাশ করতে পারে।