শিক্ষাব্যবস্থার নগ্ন ও রুগ্ণ চেহারা উন্নয়নের বহুবিধ আলগা চাদর দিয়ে আর ঢাকা সম্ভব হচ্ছে না। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর চাপে তৈরি হওয়া শিক্ষার মৌলিক বিপর্যয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাঠ্যবই, পাঠদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন ব্যবস্থা- সবকিছুতেই ঘুণ ধরেছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার হীন উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নপত্রের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার গোপন ঘা বড় বিপদের নিদর্শন হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। প্রশ্নপত্রে বানান ও যতিচিহ্ন প্রয়োগের ভুল তো অনেক দিন ধরেই খুব সাধারণ ঘটনা, যা গা-সওয়া হয়ে গেছে। এখন প্রকাশ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উস্কানি; নারীর প্রতি আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক ঘৃণা-বিদ্বেষ।
বাংলাদেশের মৌলিক নীতিবিরোধী এই আত্মঘাতী প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতাকে প্রচার করা হচ্ছে শুধুই শিক্ষকদের দুর্বলতা হিসেবে। খোদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেশের ৬ হাজার ৭৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে গত মে মাসে প্রকাশিত 'একাডেমিক সুপারভিশন প্রতিবেদন'-এ তথাকথিত সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের অদক্ষতার চিত্র তুলে ধরেছে। তারা দেখেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যালয় সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরিতে অক্ষম। তারা হয় অন্য বিদ্যালয় অথবা গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল। আজকাল সরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ ইত্যাদি কাজের ওপর মানুষের আস্থা সাধারণভাবে কম। মাউশির একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা গত ৮ নভেম্বর একটি আলোচনায় জানান, সৃজনশীল প্রশ্নের ওপর তিন দিনের যে প্রশিক্ষণ হয়, তার প্রথম দিন ব্যয় হয় স্রেফ নিয়মনীতি পালন ও জড়তা মোচনে। দ্বিতীয় দিন প্রশিক্ষণে যে আলোচনা হয় তা অতি অপর্যাপ্ত। তৃতীয় দিন যাতায়াত ভাতা গ্রহণ ও বিদায় নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। তিনি প্রশ্ন তোলেন- 'এভাবে কি প্রশিক্ষণ হয়?' এর সহজ মানে হলো, মানসম্মত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিশ্চিত করার প্রতি মনোযোগ নেই।