জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়সংক্রান্ত জনসংখ্যা বিভাগের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা ২০২২’ অনুযায়ী সর্বশেষ জনসংখ্যার প্রক্ষেপণ বলছে ১৫ নভেম্বর ২০২২, বিশ্বের জনসংখ্যা পৌঁছে যাবে ৮০০ কোটি বা ৮ বিলিয়নে। ১৮০৪ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল এক বিলিয়ন। ১৯২৭ সালে হয় দুই বিলিয়ন। ১৯৭৪ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা পৌঁছে যায় চার বিলিয়নে। আর বর্তমানের আট বিলিয়ন আগামী ২০৩৭ সালে পৌঁছে যাবে নয় বিলিয়নে এবং ২০৫৮ সালে ১০ বিলিয়নে। বর্তমানের আট বিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে যদি বলি তবে বলতে হবে নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক। একদিকে চ্যালেঞ্জ আরেক দিকে সম্ভাবনার।
আগে আমাদের এ বিশ্ব কখনো আট বিলিয়ন জনসংখ্যায় পৌঁছেনি। আট বিলিয়ন জনসংখ্যা মানে আট বিলিয়ন শক্তি, বড় সংখ্যা, বড় চ্যালেঞ্জ ও বড় সম্ভাবনা। কেমন করে আমাদের এ বিশ্ব জনসংখ্যার এ আকারে এসে পৌঁছল? তা বোঝা যায় ডেমোগ্রাফিক ট্রাঞ্জিশন মডেল অনুসরণে উচ্চজন্ম ও মৃত্যুহার থেকে নিম্ন জন্ম ও মৃত্যুহারে ধাবিত হওয়া অনুযায়ী। ৮০০ কোটির এ বিশ্বে কী বার্তা রয়েছে আমাদের জন্য? কী বার্তা রয়েছে বাংলাদেশের জন্য? বিশ্বের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিশ্ব জনসংখ্যার আকার অব্যাহতভাবে বাড়ছে তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত দরিদ্র দেশগুলোতেই লক্ষণীয়।
২০২২-৫০ সালের মধ্যে ৬৫ বছরের নিচের জনগোষ্ঠী মূলত দরিদ্র ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোতেই বাড়ছে আর উচ্চ আয় ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশগুলোয় ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকবে। সম্পদশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিম্ন আয়ের ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নে জনসংখ্যার গুণগত উন্নয়নে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা উচিত। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে জনবহুল দেশ হলো চীন (১৪২৬ মিলিয়ন), ভারত (১৪১২ মিলিয়ন), যুক্তরাষ্ট্র (৩৩৭ মিলিয়ন), ইন্দোনেশিয়া (২৭৫ মিলিয়ন), পাকিস্তান (২৩৪ মিলিয়ন), নাইজেরিয়া (২১৬ মিলিয়ন), ব্রাজিল (২১৫ মিলিয়ন), বাংলাদেশ (১৭১ মিলিয়ন)।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম (১৭১ মিলিয়ন) জনবহুল দেশ হলেও ২০৫০ সালে বিশ্বে অবস্থান হবে দশম (২০৪ মিলিয়ন)। বিশ্ব জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ২ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী। জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ বলছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ১৮৪ মিলিয়নে, আর ২০৪১ সালে ১৯৭ মিলিয়নে। অতীতের অভিজ্ঞতা, বর্তমান বাস্তবতায় ও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় আট বিলিয়নের এ বিশ্বে ১৭১ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছে যা নীতিনির্ধারকসহ সবার জন্যই প্রযোজ্য।