নূর হোসেনের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে?

সমকাল ডা. মুশতাক হোসেন প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২, ১১:২১

নূর হোসেন ছিলেন সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। এরশাদের অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ৯ বছরের লাগাতার সংগ্রামে সর্বস্তর ও শ্রেণির মানুষ অংশ নেয়। নূর হোসেনের মতো শ্রমজীবী-মেহনতি-বিত্তহীন মানুষের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তারা নিজ উদ্যোগে মহল্লা ভিত্তিতে সংগঠিত কিংবা কর্মস্থলে শ্রমিক সংগঠনভিত্তিক জমায়েত হয়ে দল বেঁধে আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিত।
নূর হোসেন গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা মিনিবাস সমিতিচালিত বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। তাঁর বাবা মজিবর রহমান ছিলেন বেবিট্যাক্সিচালক; মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। নূর হোসেনের জন্ম ১৯৬১ সালে; ঢাকার নারিন্দায়। তাঁরা ছিলেন ছয় ভাইবোন; নূর হোসেন তৃতীয়। ঢাকার গ্র্যাজুয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নেন তিনি। কিছুদিন কাজ করেন মোটর মেকানিক হিসেবে। কাজের ফাঁকে নিজ উদ্যোগে সদরঘাটের কলেজিয়েট নৈশ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।


নূর হোসেন স্বৈরাচারবিরোধী কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিতেন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ছিল তিন জোটের (আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট, জাসদের নেতৃত্বে ৫ দলীয় জোট) ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। ভোট ডাকাতির সংসদ বাতিল করে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ ডাকা হয়েছিল। এরশাদ সরকার অবরোধ কর্মসূচির আগের দিনই ঢাকার সঙ্গে সব যানবাহন যোগাযোগ বন্ধ করে কার্যত রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। প্রতিবাদী নূর হোসেন পরিকল্পনা করেন কীভাবে অভিনব উপায়ে অবরোধে অংশ নেওয়া যায়। তিনি বুক-পিঠে আন্দোলনের স্লোগান লেখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পরিচিত ইকরাম হোসেনের ব্যানার ও সাইনবোর্ড আঁকার দোকান ছিল মতিঝিল বিসিআইসি ভবনের পাশে। অবরোধের আগের দিন নূর হোসেন ইকরামের কাছে আসেন তাঁর বুক-পিঠে স্লোগান লিখে দেওয়ার অদ্ভুত অনুরোধ নিয়ে।


প্রথমে ইকরাম অবাক হলেন; পরে পেলেন পুলিশের ভয়। কারণ তাঁর ঈপ্সিত স্লোগান ছিল- গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক। নূর হোসেনের জোরাজুরিতে ইকরাম বুক-পিঠে স্লোগান লিখতে বাধ্য হলেন। নূর হোসেন মিছিলে গেলেন। ইকরাম যে আশঙ্কা করেছিলেন তা-ই ঘটল। শুধু ইকরাম কেন? বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যাঁরাই নূর হোসেনকে খালি গায়ে দেখেছেন, তাঁরাই তাঁকে দ্রুত জামা পরে বুক-পিঠে লেখা স্লোগান ঢেকে রাখতে বলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ির কাছে যখন নূর হোসেন আশীর্বাদ নিতে আসেন; তিনিও তাঁকে জামা পরে নিতে বলেছিলেন। পুলিশ প্রতিবাদী যুবকের গায়ে লেখা শিল্পিত স্লোগানের জবাব দিল লেখাকে টার্গেট করে গুলির মাধ্যমে। গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে যখন তাঁর বন্ধুরা ধরাধরি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পুলিশ সে রিকশা থামিয়ে নূর হোসেনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা পুলিশ করেছে কিনা, জানা যায়নি। সম্ভবত অতিরিক্ত রক্তরক্ষরণে হূৎপিণ্ড বিদীর্ণ করা বুলেটে নূর হোসেনের মৃত্যু ঘটে। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়, 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়'।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us