ভালো খবর সব সময়ই কম পাওয়া যায়, পাওয়া গেলেও মনে ধরে না, মনে থাকেও না; কিন্তু খারাপ খবরগুলো দাগ কেটে বসে যায়, সে জন্য বিশেষভাবেই ধারণা হয় যে সেই সংখ্যা অধিক। বাংলাদেশে খারাপ খবরের এই আধিক্য অনেক কালের, এগুলোর প্রবহমানতার পুরনো ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়নে ধর্মের বাহ্যিক উপস্থিতি রয়েছে, কিন্তু ধর্ম এখানে অস্ত্র ও আবরণ মাত্র। সাম্প্রদায়িকতা প্রকৃত ধার্মিকদের কাজ নয়, এটি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের কাজ। কোনো ধর্মই অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের ওপর আক্রমণকে অনুমোদন দেয় না, বরং বিরোধিতাই করে। মুশকিলটা প্রকৃত ধার্মিকদের নিয়ে নয়, চতুর ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়ে। তারা নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থে ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। সাম্প্রদায়িকতা ব্রিটিশ ভারতে ছিল, ওই সময়ই এর শুরু; পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িকতার অবসান হওয়ার কথা নয়, হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশেও আমরা এর হাত থেকে অব্যাহতি পাচ্ছি না। কারণ সেই একই—ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার।
এ ধরনের অনেক সংগঠন বলছে তারা রাজনীতি করছে না। প্রশ্ন হলো, তাহলে তারা কী করছে? ধর্মকর্ম? ধর্মকর্ম করার জন্য তো নিজেদের ঘরবাড়ি আছে, পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদ রয়েছে। এ ধরনেরই একটি সংগঠন ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি এবং সহিংস তাণ্ডব করেছিল কেন? তা ছাড়া যে দাবিগুলো তারা তুলেছে, তাদের প্রত্যেকটিই রাজনৈতিক। বহু সংগ্রাম ও অকল্পনীয় আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র; সেই রাষ্ট্রের নিজস্ব চরিত্রটিই তারা বদলে দিতে চায়, দেশবাসীকে নিয়ে যেতে চায় মধ্যযুগীয় অন্ধকারে। এসব সংগঠনের বেশির ভাগ কর্মীই এসেছেন মাদরাসা শিক্ষার ধারা থেকে। এ দেশে মাদরাসা শিক্ষা সামাজিক সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করেনি। উপরন্তু বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। স্বাধীনতার পর যত সরকার এসেছে, কেউই মাদরাসা শিক্ষা নিরুৎসাহ করার কথা ভাবেনি; উল্টো প্রতিযোগিতামূলকভাবে ওই শিক্ষার বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পেছনেও রয়েছে দুটি রাজনৈতিক বিবেচনা। প্রথমটি হলো, মাদরাসা শিক্ষিতদের ভোটগুলো হস্তগত করা; দ্বিতীয়টি হলো, মাদরাসা শিক্ষার মধ্য দিয়ে গরিব মানুষকে গরিব অথচ সন্তুষ্ট রাখার পরিকল্পনা। এ দেশের শাসক শ্রেণি গরিবের স্বার্থ দেখে না, গরিব মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে—এটা তাদের জন্য এক মহা আতঙ্ক।