চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি মাঝারি আকারের কনফেকশনারি (দোকান)। সেই দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে যিনি আছেন, তিনি এক বছর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা ছিলেন। রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি, কক্সবাজারের বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতিসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছিলেন তিনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। পরে রাঘববোয়ালের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানোর গল্পটা তো সবারই জানা। কোথাও চাকরি না পেয়ে সেই শরীফ উদ্দিন এখন ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, দোকানে ব্যস্ত শরীফ। কর্মচারীরা খরিদ্দার সামলাচ্ছেন, সেদিকে চোখ রাখতে হচ্ছে। আবার পণ্যের দাম নেওয়া, টাকাপয়সার হিসাব রাখতে হচ্ছে।
কেমন আছেন জানতে চাইলে ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করেন শরীফ। সংসার-ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
শরীফ বলেন, ‘দেখেন ভাই, আমার বউ-বাচ্চা আছে। মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। আমিও অসুস্থ। গত ৯ মাস আমার চাকরি নেই। দুর্নীতি যদি করতাম, তাহলে বসে বসে খেতে পারতাম। যেদিন থেকে বেতন বন্ধ, ওই দিন থেকে সংসারে টান পড়েছে। চাকরির জন্য সবার কাছে গেছি, বিডিজবসে আবেদন করেছি। কিন্তু দুদক সবখানে বলে দেওয়ায় কোথাও চাকরি হয়নি। তাই ভাইয়ের এই দোকানের ক্যাশে বসে সংসার সামলাচ্ছি।’
উপসহকারী পরিচালক হিসেবে শরীফ উদ্দিন প্রায় সাড়ে তিন বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। এ মামলার পরপর ওই বছরের ১৬ জুন তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এর আট মাসের মাথায় চাকরি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।