আজ থেকে ৪৭ বছর আগে এই দিনে মুজিবনগর সরকারের চার প্রধান স্তম্ভ, বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী, জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে জেলখানার অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমন বর্বর ঘটনার দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জেলের ভেতর বিদ্রোহ কিংবা জেলের অধিবাসীদের মধ্যে দাঙ্গা থামাতে গুলি করে হত্যা করার একাধিক ঘটনা আছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, এমন সন্দেহভাজন নিরাপত্তারক্ষীদের জেল থেকে বের করে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
কিন্তু জাতীয় চার নেতা, যাঁদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছিল না। বিনা অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলে বন্দি করা হয়। তাঁরা কারাবিদ্রোহ কিংবা দাঙ্গা করেননি। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে, বিনা বিচারে রাতের অন্ধকারে জেলের অভ্যন্তরে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়।
ওই সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত আমিনুর রহমানের বর্ণনা মতে, মোশতাকের টেলিফোন নির্দেশে কারাগারের আইন ভেঙে ঘাতকদের জেলের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। আমিনুর রহমান বলেছেন, কারাগারে থাকা তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার নেতাকে একত্র করার আদেশ আসে। আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য দুই কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। আমিনুর রহমানের বর্ণনা মতে, “তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সেখানে আসার আগে কাপড় পাল্টে নিলেন। কেউ জিজ্ঞেস করলেন না তাঁদের কোথায় নেওয়া হচ্ছে? আমি নিজে থেকে বললাম আর্মি আসছে। আমার মনে পড়ে, আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি। ”