সমতলে চা চাষ হবে—এমনটি কারও ধারণায় ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পঞ্চগড় সফরে এসে সমতল ভূমিতে চা চাষের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছিলেন। এরপর স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চা চাষের জমির পরিমাণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চায়ের বাগান গড়ে তোলে। এখন এই সমতলের চা-ই পাল্টে দিচ্ছে শত বছরের পঞ্চগড়ের কৃষি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা।
ধান, পাট, আখের মাঠগুলোর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মাঠজুড়ে চা-পাতার গাঢ় সবুজ। তবে চা ঘিরে পঞ্চগড়ের কৃষকদের মাঝে যে স্বপ্ন রচিত হয়েছিল, মাঠের বাস্তবতায় তা একটু ভিন্ন। কৃষক ও কোম্পানির মাঝে একটা অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব রেখেই এ খাত প্রসারিত হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, চা কোম্পানিগুলোর একটা সিন্ডিকেট বিভিন্নভাবে তাঁদের ঠকিয়ে যাচ্ছে।
যা হোক, চা-বাগান পঞ্চগড়ের চিরায়ত ভূ-প্রাকৃতিক রূপে আনে পরিবর্তন। অন্যদিকে তেঁতুলিয়া থেকে দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘার আকর্ষণে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গুরুত্ব বাড়ছে পঞ্চগড়ের। আর এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে অনেক উদ্যোক্তা নিচ্ছেন কৃষি পর্যটনভিত্তিক প্রকল্প। পঞ্চগড় সদর উপজেলার মধুবন গ্রামের রেজাউল করিম রেজা তেমনই একজন।
মধুবন গ্রামটি সবুজ ও সুন্দর। এখানেই ব্যবসায়ী রেজাউল করিম একটি কৃষি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা থেকে সাজিয়ে তুলছেন তাঁর সমন্বিত কৃষি খামার। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কৃষিজমিতে চা-বাগানের পাশাপাশি, শুরু করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ। আরও আছে মাছের পুকুর ও গবাদিপশুর খামার।
প্রতিবার কোরবানিকে লক্ষ্য করে রেজাউল মোটাতাজাকরণের জন্য গরু লালনপালন করেন। এ বছরও তাঁর খামারে রয়েছে ৭০টির মতো গরু। ধীরে ধীরে খামার বড় করছেন রেজাউল। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সামনে রেখে চলছে খামার পরিবর্ধনের কাজ। বর্তমানে একটি শেডে গরু লালনপালনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আরও একটি শেড তৈরি হয়ে গেছে, সেখানে হবে ডেইরি খামার। ছাগল ও ভেড়া লালনপালনের জন্য আরও একটি শেড তৈরির কাজ চলছে। রেজাউলের খামারটি ঘুরতে ঘুরতে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। বললেন, ইতিমধ্যে এক কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছেন তিনি গরুর খামারটি গড়ে তুলতে। বুঝতে পারছেন ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের টেকসই খাত হবে কৃষি। এ চিন্তা থেকেই কৃষিতে বিনিয়োগ।