ক্লোটিল্ডা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো সবশেষ ক্রীতদাস জাহাজ। কুখ্যাত সেই জাহাজে করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ১১০ জন পুরুষ, নারী ও শিশুদের বন্দি করে আনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। জাহাজটিকে পুড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলঙ্কিত দাসপ্রথার নিষ্ঠুর অধ্যায়কে মুছে ফেলার চেষ্টা চলে। লিখেছেন নাসরিন শওকত
১৮৬০ সাল। জুলাইয়ের গ্রীষ্মের এক রাত। আলাবামার ঐতিহাসিক বন্দর নগরী মোবাইল বে’র তীরে এসে নোঙর করে একটি জাহাজ। গভীর রাতের আঁধারে রহস্যময় ওই জাহাজ থেকে একে একে নামানো হয় ১১০ জন বন্দি আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গকে। যাদের মধ্যে ছিল পুরুষ, নারী ও শিশু। জাহাজটির নাম ক্লোটিল্ডা, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো শেষ ক্রীতদাস জাহাজ। কুখ্যাত ক্লোটিল্ডা আটলান্টিক মহাসাগরে যখন শেষ যাত্রা করেছিল, তার ৫২ বছর আগেই ক্রীতদাস বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮৬০ সালে আলাবামার মোবাইলের ধনী ব্যবসায়ী টিমোথি মেহের আফ্রিকানদের অপহরণ করে কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনার বাজি ধরেন। তার নির্দেশে ক্যাপ্টেন ফস্টার মোবাইল থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে পাল তোলেন জাহাজ ক্লোটিল্ডার। উদ্দেশ্য ডাহোম রাজ্যে (বর্তমানের পশ্চিম আফ্রকার দেশ বেনিন) যাওয়া। সেখান থেকে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের কিনে বন্দি করে আলাবামায় নিয়েও আসেন তিনি। বন্দি ক্রীতদাসবোঝাই ক্লোটিল্ডাকে প্রথমে মোবাইল উপসাগরে ও পরে মোবাইল নদীতে আনা হয় লোকচক্ষুর আড়ালে। ওই রাতেই মোবাইল বে’র নদীর উজানে ক্লোটিল্ডাকে পুড়িয়ে তলদেশে ডুবিয়ে দেন ফস্টার। বেআইনি এই বাণিজ্যের সব আলামত এভাবেই নষ্ট করা হয় সেদিন। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধরত ইউনিয়ন সেনারা ১৮৮৫ সালে ক্লোটিল্ডায় করে আলাবামায় আসা ক্রীতদাসদের মুক্ত করেন। তারপর তারা আলাবামায় গড়ে তোলেন নিজেদের নতুন বসতি, যার নাম আফ্রিকাটাউন। ২০২১ সালের শেষ দিকে গবেষকরা জানান, মোবাইল নদীতে পাওয়া ধ্বংসাবশেষটি সুরক্ষিত ছিল। জাহাজটির মূল কাঠামোর তিন ভাগের দুই ভাগ অংশই সুরক্ষিত আছে। যার মধ্যে রয়েছে নিচের অংশের মূল ডেক। যেখানে ১৮৬০ সালে বেনিন থেকে বন্দি করে ১১০ জন দাসকে মোবাইলে নিয়ে আসা হয়েছিল এক নিষ্ঠুর সমুদ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে।