কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট নিয়ে আলাপ হচ্ছিল বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ম. তামিমের সঙ্গে। একপর্যায়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা গেলে দিনে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। জাপানের দৃষ্টান্ত দিলেন। ২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয় হয়। দেশটির সরকার জনগণের কাছে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানায়। জাপানের মানুষ সে বিপর্যয় মোকাবিলায় এতটাই সাড়া দেয় যে দেখা গেল ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের সাশ্রয় তারা করে ফেলেছে।
গত জুলাই মাসে জ্বালানির দাম একধাপে ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর পর বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়, তা ঠেকানো গেলে দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সিস্টেম লস এখন অনেক বেশি মাথাব্যথার কারণ। এটার পরিমাণ ৮ থেকে ৯ শতাংশ। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে বিজ্ঞানসম্মতভাবেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ লস হবেই। এটাকে কখনোই শূন্যতে নামিয়ে আনা যাবে না। তেলের ক্ষেত্রেও সেটা হয়। কিন্তু সরবরাহ লাইনে লিক না থাকলে গ্যাসে কোনো লস হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং, গ্যাসের সিস্টেম লসটা পুরোপুরি চুরি। সরকার নিজেও তা জানে, তিতাসও জানে। আমাদের জাতীয় সম্পদ এভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে। আর এখন তো আমরা অনেকটা সোনার দামে এলএনজি কিনে নিয়ে আসছি। জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্যাসের এই চুরি বন্ধ করতে হবে।’
সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে মাত্রাতিরিক্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কীভাবে পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়াচ্ছে, সে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আইপিডি গবেষণায় দেখিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২৮ লাখ ইউনিট শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ যন্ত্রগুলো গড়ে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দৈনিক ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চালালে অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
গরম ও শীতের মৌসুমে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদার ব্যবধান প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিশাল এ ব্যবধান তৈরি করে দিচ্ছে মূলত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রির নিচে নামতে না দেওয়ার নীতিমালা রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে যেখানে বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির নিশ্চয়তা নেই, বিশ্ববাজার থেকে প্রয়োজনীয় তেল-গ্যাস কেনার মতো ডলার যেখানে নেই, সেখানে প্রতিবছর ঢাকায় ২০ শতাংশ করে এসির ব্যবহার বাড়ছে।