সমাবেশ ও পরিবহন ধর্মঘটের সংস্কৃতি

দেশ রূপান্তর রাজেকুজ্জামান রতন প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪০

কী যে একটা পরিস্থিতি হয়েছে দেশে! নদীর মধ্যে জেগে ওঠা ডুবো চরের মতো এখানে-ওখানে ডাকা হচ্ছে পরিবহন ধর্মঘট। ছোট বাচ্চারা মাঝে মাঝে নিজের ছায়ার সঙ্গে খেলে। সে যেখানে যায় ছায়াও সেখানে যায়। ছায়াকে ধরে ফেলার এই খেলায় উত্তেজনা আছে আবার আনন্দও আছে। বড়রা দেখে হাসে আর আদর-মাখানো কণ্ঠে বলে, বোকা কোথাকার! তেমনি মনে হয় একদল বিভাগীয় সমাবেশ ডাকে আর সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ধর্মঘট হয়ে যায়। একেকটা বিভাগে ৮টা জেলা, বিভাগীয় সমাবেশে জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট হলে তারা আসবেন কীভাবে? এ যেন বাচ্চাদের ছায়ার সঙ্গে দৌড়ানোর মতো। সুকুমার রায়ের ভাষায়, ছায়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে গাত্রে হলো ব্যথা। ছায়াকে ধরতে পারে না কিন্তু ক্লান্ত, বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হতে থাকে ক্রমাগত। তেমনি কি রাজনীতিতেও চলছে। একপক্ষ সমাবেশ ডাকে তো অন্যদের ইশারায় পরিবহন ধর্মঘট। এবং এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। ওরা আগে করেছে তখন দোষ হয়নি তাহলে আমরা করলে দোষ হবে কেন? কে কার ঘাড়ে দোষ চাপাবে তার কৌশল চলছে। তবে কৌশল যাই হোক আর যেই করুক শেষ পর্যন্ত ঘাড়টা জনগণের এবং বোঝাটা বহন করতে হবে তাদেরই। সে বোঝা দুর্ভোগের, ভাড়া বৃদ্ধির, দ্রব্যমূল্যের অথবা পুলিশি হয়রানির আরও অনেক কিছুর।  


একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে সামনে রেখে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর রংপুর বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। মালিক সমিতি কি ধর্মঘট আহ্বান করতে পারে কিংবা শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট আহ্বান করলে কী নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। তবে ধর্মঘট হবে, বাস বন্ধ থাকবে এবং ময়মনসিংহ, খুলনার ধারাবাহিকতায় রংপুরের পর বরিশালেও ধর্মঘট হবে। মালিক সমিতির কেউ কেউ বলছেন, কেন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে তা তো জানেন, তাহলে প্রশ্ন করেন কেন? ধর্মঘট আহ্বানকারীদের দাবিগুলো দেখলে বোঝা যায় এ হলো স্থায়ী দাবিতে অস্থায়ী কর্মসূচি। তারা বলেছে, মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বন্ধ করতে হবে। এদের কারণে দুর্ঘটনা হয়, বাসমালিকরা যাত্রী পান না। ফলে এসব বন্ধ করতে হবে। এই দাবিতে রংপুরে ২৮-২৯ অক্টোবর এবং আগামী ৪-৫ নভেম্বর বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। অন্যদিকে ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে একই কায়দায় খুলনা ও ময়মনসিংহে ওই একই দলের গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। যদি কেউ বলেন একই দাবিতে ধর্মঘটের আহ্বান একটি বিশেষ দলের কর্মসূচির সময়েই কেন বারবার ডাকা হচ্ছে, সারা বছর কেন ডাকা হয় না? তাহলে কি সমাবেশ ও ধর্মঘটের মধ্যে যোগসূত্র আছে? ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সব সময়ই জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে এ ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। ঐক্য আছে কিন্তু সম্পর্ক নেই। কি অদ্ভুত সম্পর্কহীন ঐক্য!   


রংপুরের ধর্মঘট আহ্বানের কারণ এবং পদ্ধতি জানা না গেলেও বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বাস মালিক সমিতির নেতারা তাদের ভয়াবহ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। যদি প্রশাসন তাদের দাবি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে ৪-৫ নভেম্বর বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও অভ্যন্তরীণ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে। জিজ্ঞাসা হতে পারে, এই দাবিতে আগে তারা কী কী কর্মসূচি পালন করেছেন, সে ক্ষেত্রে পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা কী ছিল সে সম্পর্কে অবশ্য কিছু জানা যায়নি এবং আন্দোলনকারীরা নিজেরাও তা উল্লেখ করেননি। যেকোনো চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে কিছু আন্দোলন তো করতে হয়। সে রকম কোনো আন্দোলনের খবর কেউ জানেন কি না তা জানা নেই। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us