গ্যাস সংকটে দেশের টেক্সটাইল শিল্প খাতের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, কোথাও কোথাও দিনে ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না। আবার গ্যাস থাকলেও চাপ থাকছে না। এ কারণে ৬০ শতাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না। বর্তমানে সুতার উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি জানান, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, আশুলিয়া, ভালুকা, গাজীপুর, সাভার এলাকায় গ্যাসের অবস্থা খুব নাজুক। কোনো কোনো এলাকায় দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল অক্টোবরে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতি হবে, নভেম্বরে আরও উন্নতি হবে; ডিসেম্বরে সংকট থাকবে না। কিন্তু এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বস্তুত টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা চতুর্মুখী সংকটে রয়েছেন। একদিকে অর্ডার সংকট। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ। গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বাড়ছে। দিনের উল্লেখযোগ্য সময় কারখানা চালু রাখা সম্ভব না হলেও শ্রমিকদের নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে ইতোমধ্যে অনেক কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের টেক্সটাইল খাতের লক্ষ্য পূরণ হবে কী করে?
আন্তর্জাতিক বাজারে এখন এলএনজি অতি চড়া দামে বিক্রি হলেও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে দেশে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন কিউবিক ফুট) এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে যে দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এখন স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা হলে কয়েক গুণ খরচ পড়বে। দেশের টেক্সটাইল শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি, বিদ্যমান গ্যাস সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হোক। আমরা মনে করি, টেক্সটাইল শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের এ দাবি পূরণের লক্ষ্যে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। জ্বালানি খাত নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টেক্সটাইল শিল্পসহ দেশের অন্যান্য শিল্প খাতে যাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকরা চাকরি হারাবে, আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। এতে সামগ্রিকভাবে চাপে পড়বে দেশের পুরো অর্থনীতি।