একটি বিশেষ গোষ্ঠী কারসাজি করে যখন ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে, খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকটসহ নানা সংকটে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত, ঠিক তখন ২০২২ সালের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেনএস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। সুইডেনের নোবেল কমিটির (রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস) পক্ষ থেকে ২০২২ সালের অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপকদের নাম ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘‘অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলির ভূমিকা, বিশেষত আর্থিক সঙ্কটের সময় বাজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের কার্যকলাপ অনুধাবন করতে তিন অর্থনীতিবিদ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।’’ শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, আশির দশকের গোড়ার দিক থেকেই তিন অর্থনীতিবিদ তাদের গবেষণার মাধ্যমে, আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলার ব্যাংকের বহুমুখী ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ডগলাস ডায়মন্ড এবং ফিলিপ ডিবভিগ একটি তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাংকগুলির প্রয়োজনীয়তা। বর্ণনা করেছেন কীভাবে সমাজে তাদের ভূমিকাই তাদের পতন সম্পর্কে গুজব তৈরি করে। আর কীভাবে সমাজ এই দুর্বলতা কমাতে পারে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে ব্যাংকগুলির বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে তারা তাদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন যে, যদি স্বল্পমেয়াদী ঋণ দীর্ঘমেয়াদী ঋণে রূপান্তরিত হয়, তাহলে এর রূপান্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি কী কী। তারা আরও বলেন, ব্যাংকের আমানতের ওপর সরকারি গ্যারান্টি আর্থিক সংকটকে অনেকাংশে বাড়তে দেয় না। কারণ সরকারি গ্যারান্টি আমানতকারীদের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করে। তার ফলে আমানতকারিরা নিজেদের অর্থ ব্যাংকে রাখতে ভরসা পায়। আর এই বাড়তি পাওয়া অর্থ ব্যাংক আরও ঋণ বিতরণে ব্যবহার করতে পারে।