বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের সম্পৃক্ততার কারণে বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতির চর্চা হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি নিজেই বিভিন্ন মূল্যবোধ, আদর্শ বা নীতির মতাদর্শ নিয়ে বিকশিত হয়েছিল, সেগুলোকে ডান বা বাম যেভাবেই অভিহিত করা হয়ে থাকুক। যেকোনো মানবসমাজ বা রাষ্ট্রে রাজনীতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যখন সমাজ বা রাষ্ট্রকে শাসন বা পরিচালনা করার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আমরা এটিকে একটি ‘৪পি-প্রতিনিধি’ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখতে পারি, যার জন্য ব্যক্তি (পারসন), জনগণ (পিপল), দল (পার্টি) এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ (পলিটিক্যাল আইডিওলজি) প্রয়োজন পড়ে।
রাজনীতিতে জড়িত একজন ব্যক্তিকে রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এই প্রক্রিয়ার অন্য তিনটি বিষয়কে অবশ্যই গণ্য করতে হবে। তবে যেকোনো ব্যক্তি, দল বা রাজনৈতিক মতাদর্শের সাফল্য নির্ভর করে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতার ওপর।
আমরা জানি যে রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীদের মনে মুদ্রিত থাকা আবশ্যক, তা হলো নীতি, মতবাদ, বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আদর্শের সমাহার। রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁদের জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণ, রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখার জন্য তাঁদের শক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সর্বোপরি রাজনৈতিক মতাদর্শ একজন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ক্যারিয়ার গঠনে সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে গড়ে তোলে। এই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুত হওয়া শুধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনকেই ধ্বংস করে না, বরং তাঁকে সাধারণ জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে এবং তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর যাত্রার শুরুতে যেমনটি ভেবেছিলেন, সেভাবে তিনি জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। সন্দেহ নেই যে রাজনৈতিক মতাদর্শই রাজনৈতিক পথে অগ্রসর হওয়ার শক্তি, যা তাঁকে শেষ পর্যন্ত দেশ ও জনগণের সেবা করার জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে যাবে, যেমনটি তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন।
রাজনৈতিক মতাদর্শ অবশ্যই একটি আস্থার তন্ত্র, যা সমাজের জন্য অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার এবং সরকারি আদেশ-নির্দেশের মূল হিসেবে কাজ করে এবং ন্যায্যতা দেয়, এসবের রক্ষণাবেক্ষণ বা অর্জনের জন্য কৌশল নির্ধারণ করে এবং সরকারি আচার-অনুষ্ঠান, ব্যক্তিত্ব এবং নীতিগুলোর মূল্যায়নে সহায়তা করে। এটি রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সমাজের জন্য ভালো কিছু তৈরি করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অনুসরণ করার উপায়ও নির্দেশ করে। রাজনৈতিক মতাদর্শবিহীন একজন রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা দাঁড়বিহীন নৌকার মাঝির মতো। তিনি বিশাল সমুদ্রে ভেসে বেড়াবেন এবং কখনোই তীর খুঁজে পাবেন না।