বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'ষড়যন্ত্র' একটি বহুল উচ্চারিত শব্দ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রায় সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন ধারণায় প্রশাসনসহ জনগণের একটি অংশ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ছে, একবার শীর্ষস্থানীয় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দেশের সমৃদ্ধ উপজেলা কলাপাড়ায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনগুলো দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং কোনো কোনোটা ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এ ধরনের লাইনে এক জায়গায় সমস্যা হলে পুরো লাইনই বন্ধ করতে হয়। তিনি কথা শেষ করেছিলেন এই বলে- দেশের কোথাও কোথাও ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা নাশকতার সম্পর্ক আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।
ষড়যন্ত্র খোঁজার বিপদ হলো, যারা খোঁজে তারা বিষয়টিতে এতটাই মানসিকভাবে ডুবে থাকে যে, মোটামুটি সবকিছুতেই এটা খোঁজে। গত তিন দশক ধরে দেশের রাজনীতিকদের একাংশ নির্বাচনের আগে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে ষড়যন্ত্র খুঁজে পেতে উদ্গ্রীব। তাঁরা সেই কথা বিভিন্নভাবে প্রকাশও করেন, যা আমরা সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানতে পারি।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩ হলেও বাংলাদেশের জন্য সব দেশ সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার সব দেশের কাছে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য এই আমেরিকাই আবার এককভাবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ।
অতএব, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবছে, সেটা স্বাভাবিকভাবেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কী বলছেন কিংবা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ নিয়ে কী বলছেন, তার ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণের চেষ্টা ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের মধ্যে সব সময় দেখা যায়। টেলিভিশনের টকশোগুলোও এসব আলোচনা লুফে নেয়।
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চিন্তাভাবনা কী; কোন কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করতে চায়; সে সবই 'ওপেন ডকুমেন্ট'। সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ 'ইন্টিগ্রেটেড কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি বাংলাদেশ' লিখে সার্চ দিলে প্রথমেই একটি লিঙ্ক দেখাবে। ২৩ পৃষ্ঠার সেই ডকুমেন্টে যে পাঁচটি মূল লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে, তার বাইরে বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার অন্য কোনো ভাবনা নেই। কেউ যদি বাংলাদেশস্থ আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বিভিন্ন সময়ের বক্তৃতা ও বিবৃতি দেখে কিংবা আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিংবা অন্য কোনো দপ্তরের বক্তব্য দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন, সবই এই ইন্টিগ্রেটেড কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজির অংশ। আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কাজ ও বক্তব্যও এই কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজির অংশ।