শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও (শিল্পনীতি ২০১৬) বিদ্যমান ওই প্রণোদনা-সুবিধা বহাল রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে (অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৪.৯)। কিন্তু গত ৩০ বছরে এর বাস্তব ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা কি কখনো মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে? এটি শুনতে খুবই ভালো শোনায় যে শিল্পনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দলিলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে ঘোষিত ওই প্রণোদনার প্রায় কোনো অংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো ওই কারুশিল্পীদের ভাগ্যে জোটেনি, কারুশিল্পীদের নাম করে তা ভোগ করেছেন বিত্তবান বণিকেরা।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) নাম করে অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ভোগ করেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ আসলে ওই পর্যায়ের উদ্যোক্তা নন, যাঁদের জন্য সভা-সেমিনারের আলোচনায় মুখরোচক মমতায় আমরা গলদঘর্ম হই। বস্তুত এসব মুখরোচক আলোচনার বেশির ভাগই অত্যন্ত অগভীর এবং এ খাতের বাস্তব চর্চা ও তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সামান্য কিছু তথ্য ও প্রয়োজনের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কয়েকজন এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নতুন এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন (প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। প্রস্তাবকারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি মুখরোচক ও অগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, যার সঙ্গে এ খাতের বাস্তব চাহিদা ও প্রয়োজনের কোনোই মিল নেই। একই অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁদের অন্য বক্তব্য থেকেই এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়, যেখানে তাঁরা মূলত ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজিধারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেটি খুবই যথার্থ।