ফেলে আসা ছোটবেলা মাঝে মধ্যেই দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে। সেদিন মনে পড়ল মহররমের কথা; শেরপুর—আমাদের সেই মফস্বলের গল্প। গোধূলির লাল আকাশ দেখে আমরা বলতাম, হাসেন-হোসেনের রক্ত। দাদি বলতেন কারবালার গল্প। গ্রামের যে স্কুলে আমি পড়তাম তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা খাল। খালের পাশে সবুজ ঘাসের চত্বরে বসতো মহররমের মেলা।
চিনির সাজ, বাতাসা, বাদাম তক্তি, মাটির ঘোড়া, টমটম গাড়ি, পুতুল, হাড়ি-পাতিলের পসরা বসতো। সেই মেলায় ঘুরপাক খেত লাল-সবুজ নিশানওয়ালা মিছিল। লম্বা বাঁশের মাথায় দোল খাওয়া নিশানের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আমরা। বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে মিছিলগুলো যেত।
মিছিলের আগে পিছে থাকতো মর্সিয়ার বিভিন্ন দল। দলগুলো কারবালার যুদ্ধ নিয়ে শোকাত্মক গান-গল্প বয়ান করতো; তার সঙ্গে দেখাতো লাঠি খেলা, বেত খেলা, তলোয়ারের খেলা। আমরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে গোল হয়ে সেই খেলা দেখতাম।
মহররম ফুরিয়ে যেতে না যেতেই শরতের বাতাসে ভাসতো দুর্গাপূজার গন্ধ। জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে যেত, এবার মা ঘোড়ায় চড়ে আসবেন, নাকি নৌকায় করে আসবেন! ঘোড়ায় চড়ে এলে শুকনো থাকবে, আর নৌকায় এলে প্রচুর বৃষ্টি হবে; আমরা এসব শুনতাম।