মানুষের দুর্দশা ও দারিদ্র্য তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর ছিল অমলেন্দুর প্রস্তাব, এখানে আমাদের সঙ্গে থেকে যাও। মেরি টাইলারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ মোটেই সহজ ছিল না। এপারে ওপারে দুই মেরুর দূরত্ব। তবু থাকবারই সিদ্ধান্ত নিলেন মেরি টাইলার। অমলেন্দুর পরিবারের সঙ্গে হৃদ্যতা জন্মে গেছে তার ইতিমধ্যেই। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেও। অমলেন্দু বড় চাকরি নিতে পারতেন কলকাতার বাইরে গিয়ে, ভারতেই। কিন্তু তিনি কলকাতাতেই রয়ে গেছেন, সেই বিলাসবিমুখতা বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল মেরি টাইলারকে। আড়ম্বরহীন এক অনুষ্ঠানে বিয়ে হয়েছিল তাদের। তারপরে ওই গ্রাম দেখতে যাওয়া, এবং কারাগারে একটানা পাঁচ বছর বিনা বিচারে।
মেরি টাইলারের ভারত মোটেই আধ্যাত্মিক নয়, একেবারেই ইহজাগতিক, মূলত তা কারাগারের। না, কারাগারের বিষয়ে তার আদৌ কোনো আগ্রহ ছিল না, বিন্দুমাত্র নয়। সেটা ছিল অপর মেরির, মেরি কার্পেন্টারের, রামমোহনের ওপর যিনি বই লিখেছেন, ভারতবর্ষে এসে যিনি কারাগারে কারাগারে ঘুরেছেন সংস্কারের সুপারিশ করবেন বলে, অথচ অদৃষ্টের পরিহার এমনি যে, মেরি টাইলারকে কারাগার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ বাস্তবিক অভিজ্ঞতা লাভ করতে হলো। এ কারাগার মেরি কার্পেন্টার দেখেননি, বহিরাগত কোনো পরিদর্শকের পক্ষেই একে দেখা সম্ভব নয়, দেখতে হলে ভেতরে থাকতে হয়, রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে মেরি টাইলার তাই ছিলেন।